যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে মুক্ত করতে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের আমদানীকৃত পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার অ্যাপলের বাজারমূল্য ৩০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমেছে। যদিও সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী টিম কুক প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুল্ক ঘোষণার পর পরই অ্যাপলের বাজারমূল্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে আইফোন নির্মাতার শেয়ারের দাম ৯ শতাংশের বেশি কমে যায়। ফলে এর বাজারমূল্য ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি ডলার থেকে কমে ৩ লাখ ৫ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা একদিনের রেকর্ড হিসেবে সবচেয়ে বড় মূল্য হ্রাস।
ট্রাম্পের শুল্ক অ্যাপলের এশিয়ার সমস্ত বৃহত্তম সরবরাহকারী ও উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় আঘাত করেছে, বিশেষত চীন, তাইওয়ান, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন আমদানি। এ আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাক ও প্রযুক্তি জায়ান্টের বিক্রি করা প্রায় প্রতিটি মডেলের আনুষঙ্গিক পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক। গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপল ২০ হাজার কর্মী নিয়োগ ও চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মধ্যে টেক্সাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য সার্ভার অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির ৯০ শতাংশেরও বেশি উৎপাদন চীনে রয়েছে। সিটি গ্রুপের বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটি থেকে মার্কিন আমদানি কমপক্ষে ৫৪ শতাংশ সম্মিলিত শুল্কের সম্মুখীন হতে চলেছে। যদি অ্যাপলের মতো কোম্পানি এ অতিরিক্ত খরচ ক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দেয়, তাহলে আইফোনের দাম বাড়তে পারে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে হাই-এন্ড বা উচ্চমূল্যের আইফোনের দাম উঠবে ২ হাজার ৩০০ ডলারে। রোজেনব্ল্যাট সিকিউরিটিজের বিশ্লেষকদের হিসাব অনুযায়ী, শুল্কজনিত অতিরিক্ত খরচের ভার ক্রেতাদের ওপর দেয়া হলে আইফোন ১৬-এর দাম ৪৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৪২ ডলার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। ৬ দশমিক ৯ ইঞ্চি ডিসপ্লে ও ১ টেরাবাইট স্টোরেজযুক্ত আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের বর্তমান বাজারমূল্য ১ হাজার ৫৯৯ ডলার। শুল্কসংক্রান্ত মূল্যবৃদ্ধি গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিলে এর দাম বেড়ে প্রায় ২ হাজার ৩০০ ডলারে পৌঁছতে পারে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এদিকে অন্য বিশ্লেষকরা বলেছেন, অ্যাপলের প্রধান বাজারগুলোয় আইফোনের বিক্রি কমে যাচ্ছে। কারণ অ্যাপলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ফিচারটি ক্রেতাদের মধ্যে তেমন উত্তেজনা তৈরি করতে পারেনি। এমন অবস্থায় ডিভাইসের দাম বেড়ে যাওয়া অ্যাপলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যদিও অ্যাপল ভিয়েতনাম ও ভারতেও কিছু আইফোন উৎপাদন শুরু করেছে, তবে বেশির ভাগ আইফোন এখনো চীনে তৈরি হয়। এদিকে ভিয়েতনাম ও ভারতও শুল্কের আওতায় পড়েছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন