ভারতের ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে বলেছে, ভারতের যেসব ব্যাংক রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় ঢুকতে পারবে না।
‘ইন্ডিয়ান ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন’কে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মেশিন টুলস ও মাইক্রো–ইলেকট্রনিকসের মতো সংবেদনশীল পণ্য আমদানি করে। লেনদেন সহজ করার জন্য বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করে মস্কো।
এই চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অর্থসচিব ওয়ালি আদেয়েমো।
চিঠিতে অবশ্য পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি, ভারতের কোন ব্যাংকগুলো রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করছে। ব্যাংকগুলোর জন্য নির্দিষ্ট উদ্বেগের কথা বলা হয়নি। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনকি অন্যান্য দেশকেও তারা রাশিয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নয়াদিল্লিকেও তারা চাপ দিয়েছে। যদিও ভারত সেই চাপ অগ্রাহ্য করে রাশিয়ার কাছ থেকে উল্টো তেল কেনা বাড়িয়েছে।
সম্প্রতি রাশিয়া সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে অনেক জল্পনাও তৈরি হয়েছে। এই সাক্ষাতের পর ভারত জানিয়েছে, রাশিয়ায় রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে ভারত। পুতিন ও মোদি অঙ্গীকার করেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে (১০ হাজার কোটি ডলার) উন্নীত করা হবে; বর্তমানে যা ৬৫ বিলিয়ন ডলার (৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার)। এর মধ্যে ভারত রাশিয়া থেকে মূলত তেল ও সার কিনবে এবং বিনিময়ে রাশিয়ার কাছে তারা কৃষি ও শিল্পপণ্য বিক্রি করবে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতের ব্যাংক নিয়ে এই সতর্ক বার্তা পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়ালি আদেয়েমো বলেছেন, গত বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেয় জো বাইডেন প্রশাসন। এ ছাড়া রাশিয়ার সামরিক শিল্পের সঙ্গে লেনদেনে যেসব বিদেশি ব্যাংকের মদদ আছে, তা–ও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয় তখন। তারপর ভারতীয় ব্যাংকগুলোকে এই চিঠি। তবে এই চিঠির বিষয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি ইন্ডিয়ান ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন।
আদেয়েমো চিঠিতে আরও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বন্ধু দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং তাদের রপ্তানির রাশ টেনে ‘আর্থিক ও বৈষয়িকভাবে’ রাশিয়াকে বঞ্চিত করে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অর্থসচিব অবশ্য ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। চিঠিতে বলা হয়, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বাণিজ্য ১১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। দুই দেশ একে অপরের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করা নিয়ে সাবধান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে ইন্ডিয়ান ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অর্থসচিব। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার নির্দেশনা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কী পদক্ষেপ নেবে, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার সামরিক শিল্পসংক্রান্ত ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সাহায্য হারাতে পারে। ইন্ডিয়ান ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বা ভারতীয় শিল্প সমিতিকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
Source: টাইমস অব ইন্ডিয়া
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন