ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বরখাস্ত হওয়া হাজারো কর্মীর পুনর্বহালে মার্কিন আদালতের আদেশ – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০২:৪০ অপরাহ্ন

ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বরখাস্ত হওয়া হাজারো কর্মীর পুনর্বহালে মার্কিন আদালতের আদেশ

  • ১৫/০৩/২০২৫

ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলোর দাবি, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অন্তত ২৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে হাজারো পরীক্ষামূলক (প্রবেশনারি) ফেডারেল কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছিল, তাদের পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া ও মেরিল্যান্ডের দুটি আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দেয়া এই রায় ট্রাম্প এবং তার শীর্ষ উপদেষ্টা ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ফেডারেল আমলাতন্ত্র সংকুচিত করার প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় আইনি বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে তাদের দ্বিতীয় দফার ছাঁটাই পরিকল্পনা ও বাজেট কাটছাঁটের খসড়া জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে যুক্তরাষ্ট্রের জেলা জজ জেমস ব্রেডার ২০টি ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্যের পক্ষে রায় দিয়ে বলেছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ১৮টি সংস্থা যে গণছাঁটাই করেছে, তা ফেডারেল কর্মীদের চাকরিচ্যুতির নিয়মের পরিপন্থী।
এই নির্দেশের আওতায় রয়েছে পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ), ভোক্তা আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরো (সিএফপিবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড)। এছাড়া, কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা, স্বরাষ্ট্র, শ্রম, পরিবহন, অর্থ এবং ভেটেরান্স বিষয়ক দপ্তরসহ একাধিক সংস্থাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছিল, এসব কর্মীদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ও অন্যান্য কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে আদালত বলেছে, প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল একটি পরিকল্পিত গণছাঁটাই, যা আগে থেকেই রাজ্য সরকারকে জানানো উচিত ছিল।
ব্রেডার তার রায়ে বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই ব্যক্তিগত কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে না।’
এর আগে একই দিনে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর জেলা জজ উইলিয়াম আলসাপও ছয়টি সংস্থার ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগও রয়েছে, যা মেরিল্যান্ডের রায়ের আওতায় আসেনি।
আলসাপ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী ব্যবস্থাপনা দপ্তর (ওপিএম) এসব সংস্থাকে গণহারে কর্মী ছাঁটাই করতে বলেছিল, অথচ তাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমাদের সরকার একজন দক্ষ কর্মীকে ছাঁটাই করবে এবং বলবে এটি পারফরম্যান্সজনিত কারণে হয়েছে, যখন বাস্তবে এটি সত্য নয়।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে।
‘প্রেসিডেন্টের হাতে পুরো নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা রয়েছে—একক জেলা আদালতের বিচারকরা এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা ব্যাহত করতে পারেন না’, বলেন লেভিট।
ট্রাম্প প্রশাসন, বিশেষ করে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি’র প্রধান ইলন মাস্ক, ফেডারেল কর্মীবাহিনী সংকুচিত করতে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ২০২৫ সালে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৩ লাখ ফেডারেল কর্মী ছিলেন। তার প্রশাসনের প্রথম ধাপে মূলত প্রবেশনারি (পরীক্ষামূলক) কর্মীদের লক্ষ্য করা হয়েছে, যাদের চাকরির নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে কম।
ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলোর দাবি, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অন্তত ২৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। সাধারণত প্রবেশনারি কর্মীরা এক বছরের কম সময় একই পদে থাকেন, যদিও কিছু অভিজ্ঞ কর্মীও এই তালিকায় পড়েছেন। তাদের চাকরির নিরাপত্তা কম হলেও সাধারণত পারফরম্যান্সজনিত কারণ ছাড়া তাদের বরখাস্ত করা যায় না।
বাদীপক্ষ বলছে, গণছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়, যেমন—স্থানীয় ও রাজ্য সরকারকে অন্তত ৬০ দিন আগেই জানানো। কিন্তু এসব নিয়ম উপেক্ষা করেই ছাঁটাই কার্যকর করা হয়েছে, ফলে হঠাৎ করে বেকার ভাতার আবেদন এবং সামাজিক সেবার চাহিদা বেড়ে গেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, প্রবেশনারি কর্মীদের যেকোনো কারণে ছাঁটাই করার অধিকার ফেডারেল সংস্থাগুলোর রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী ব্যবস্থাপনা দপ্তর ফেব্রুয়ারিতে বলেছিল, প্রবেশনারি সময়কাল মূলত চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ, এটি কোনো স্থায়ী নিয়োগের নিশ্চয়তা দেয় না।
কিন্তু ওয়াশিংটন রাজ্য, বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর করা মামলায় আদালত ভিন্ন মত দিয়েছে। মামলার অন্যতম বাদী আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের প্রেসিডেন্ট এভারেট কেলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই প্রশাসন ফেডারেল সংস্থাগুলোর কাজকে দুর্বল করতে চায়। কিন্তু এই রায় আমাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ জয়।’
গত মাসে বিচারক উইলিয়াম আলসাপ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রবেশনারি কর্মী ছাঁটাইয়ের নির্দেশ স্থগিত করেছিলেন। তবে তখন তিনি ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পুনর্বহালের আদেশ দেননি। পরবর্তীতে মামলায় সংশোধন এনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হলে নতুন রায় আসে।
এদিকে, ফেডারেল কর্মীদের আপিল পর্যালোচনা করা ‘মেরিট সিস্টেমস প্রোটেকশন বোর্ড’ চলতি মাসের শুরুতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে প্রায় ৬,০০০ প্রবেশনারি কর্মীকে সাময়িকভাবে পুনর্বহাল করতে বলেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই আইনি লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us