সর্বশেষ দশকে সৌদি আরবের আবাসন খাতে বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। দেশটির নতুন নতুন শহর, রিসোর্ট ও বাণিজ্যিক ভবনে ব্যবসায়ীরা লগ্নি করছেন। তবে দেশের পাশাপাশি বিদেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ সৌদি আরবে বেড়ে চলেছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের এ বৃহত্তম অর্থনীতির প্রায় ৭৩ শতাংশ আবাসন খাতের বিনিয়োগকারী যুক্তরাজ্যের বাজারে কাজ করতে আগ্রহী বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্য যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের শীর্ষ গন্তব্য হয়ে উঠেছে, এ জরিপে সে প্রতিফলনই উঠে এসেছে।
জরিপটি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিলেক্ট প্রোপার্টি। জরিপে দেখা যায়, দেশটিতে চলতি বছর গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) অঞ্চল থেকে আসা বিনিয়োগ বেড়ে ৩২০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। জিসিসির বিনিয়োগকারীরা মনে করছে, যুক্তরাজ্যে লগ্নির মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আসবে। গত এক দশকে যুক্তরাজ্যের প্রোপার্টি মার্কেটে জিসিসির বার্ষিক গড় বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৪০ কোটি ডলার। বর্তমানে কভিড-১৯-এর ধাক্কা ও ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া পার করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মাঝে চলতি বছরের পূর্বাভাসকৃত বিনিয়োগের অংক ব্যবসায়ীদের আগ্রহকে তুলে ধরছে। সিলেক্ট প্রোপার্টির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিনিয়োগের ব্যাপক চাহিদা, নিশ্চিত মুনাফা, আবাসন খাতে উল্লেখযোগ্য হারে ভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং সম্পদে বৈচিত্র্য থাকার কারণেই মূলত সৌদির ব্যবসায়ীরা যুক্তরাজ্যের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সিলেক্ট প্রোপার্টির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যাডাম প্রাইস বলেন, ‘সৌদি আরবের ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহামের মতো শহরের ব্যাপারে আগ্রহী। যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব শহরকে সবচেয়ে সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এসব শহরে আবাসন খাতের মূল্য ১৯ শতাংশ বেড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা বৈচিত্র্যময় করার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও দেশটির প্রোপার্টি মার্কেট পরীক্ষিত একটা বাজার। এজন্য জিসিসির একের পর এক বিনিয়োগকারী যুক্তরাজ্যকে সেরা গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন।’
অ্যাডাম প্রাইস বলেন, ‘আমাদের জরিপ বলছে, সৌদি আরবের ৭৩ শতাংশ বিনিয়োগকারী যুক্তরাজ্যে, বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহামের আবাসন খাতে অর্থলগ্নির কথা ভাবছেন।’
যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে বিদেশীদের বিনিয়োগ আগ্রহ নিয়ে অ্যাডাম প্রাইস আরো বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের শহরগুলো বিনিয়োগকারীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।’
জরিপে দেখা গেছে, সৌদি আরবের ৬৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী আবাসনে বিনিয়োগ করার বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে। আর ৯০ শতাংশ বিনিয়োগকারী এটা স্বীকার করেন বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাজ্যই সবার শীর্ষে। আর ৮৫ শতাংশ মনে করেন, দেশটির আবাসন খাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিনিয়োগ করা যায়। প্রাইস জানান, সম্প্রতি ‘ইলেকট্রিক ট্র্যাভেল অথরাইজেশন’ চালু হওয়ার পরেই মূলত সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে যায়।
সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদহারের টানাপড়েনে যুক্তরাজ্যের ভোক্তাদের বেশ সংকটে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয়রা আবাসন ব্যয় নিয়ে টালমাটাল সময় পার করছেন। কিন্তু এ খাতে বিদেশীদের বিনিয়োগ নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। একাধিক গবেষণা সূত্রে জানা যায়, অবৈধ পথে পাচার হওয়া অর্থের বড় একটি গন্তব্য হয়ে উঠেছে যুক্তরাজ্যের আবাসন খাত। মূলত অফসোর বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে দেশটির আবাসন খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে।
সূত্র : অ্যারাবিয়ান বিজনেস।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন