বিভিন্ন দেশের রয়েছে নিজস্ব নাম; বিশ্বের কয়েকটি দেশের নামের যে অর্থ – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন

বিভিন্ন দেশের রয়েছে নিজস্ব নাম; বিশ্বের কয়েকটি দেশের নামের যে অর্থ

  • ২৩/০২/২০২৫

এশিয়ায় প্রায় ৪৮০ কোটি মানুষের বাস এবং এখানে ২,৩০০-র বেশি ভাষা প্রচলিত। বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০টি দেশে ৭,০০০-এর বেশি ভাষা প্রচলিত। এই ভাষাগত বৈচিত্র্যের ফলে অনেক দেশের স্থানীয় নাম ইংরেজি নামের থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করে, যার লক্ষ্য বিশ্বের সব ভাষার সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকায় শিক্ষার্থীরা বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। পুলিশের গুলিতে চার শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন তীব্রতর হয় এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়। এক বিশ্লেষণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের নাম ও তাদের অর্থ বোঝার চেষ্টা করেছে আল জাজিরা।

আফ্রিকা

আফ্রিকায় প্রায় ৩,০০০ ভাষা প্রচলিত, যা মহাদেশটির ৫৪টি দেশে ছড়িয়ে আছে। এখানকার অনেক দেশের নাম ঔপনিবেশিক অতীতের সঙ্গে সম্পর্কিত, আবার কিছু নাম পর্তুগিজ ও আরব বণিকদের প্রভাব থেকে এসেছে। যেমন, মিসরকে আরবিতে ‘মাসর’ বলা হয়, যা ‘মিজরাইম’ নামের প্রাচীন উৎস থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। এর অর্থ ‘সীমান্ত’ বা ‘বন্দর’। লাইবেরিয়ার নাম লাতিন শব্দ ‘লিবার’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘স্বাধীন’। এটি ১৮২০-এর দশকে মুক্ত আফ্রিকান-আমেরিকান দাসরা প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থানীয়ভাবে ‘ম্জানসি’ নামটি জনপ্রিয়, যা জুলু শব্দ ‘উম্জানসি’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ‘দক্ষিণ’।

এশিয়া

এশিয়ায় প্রায় ৪৮০ কোটি মানুষের বাস এবং এখানে ২,৩০০-র বেশি ভাষা প্রচলিত। চীনের ইংরেজি নাম চিন (বা কিন) রাজবংশ থেকে এসেছে বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে চীনারা নিজেদের দেশকে ‘ঝংগো’ বলে, যার অর্থ ‘মধ্যরাজ্য’। এটি চীনের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে, যেখানে দেশটিকে সভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে দেখা হতো।

ভারতকে প্রায়ই ‘ভারত’ নামে ডাকা হয়, যা সংস্কৃত থেকে এসেছে। সংস্কৃত বিভিন্ন গ্রন্থে ‘ভারত’ শব্দটির হদিস পাওয়া যায় প্রায় ২,০০০ বছর আগেই। ‘হিন্দুস্তান’ নামটি উর্দু থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘হিন্দুদের ভূমি’। ইংরেজি নাম ‘ইন্ডিয়া’ এসেছে সিন্ধু নদীর (ইন্দাস) নাম থেকে, যা প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল।

জাপানি ভাষায় জাপানকে ‘নিহোন’ বা ‘নিপ্পোন’ বলা হয়, যার অর্থ ‘সূর্যের উৎস’। এটি ‘নি’ (সূর্য) ও ‘হন’ (উৎস) শব্দ থেকে এসেছে। চীনের পূর্বদিকে অবস্থিত জাপানকে ‘সূর্যোদয়ের দেশ’ বলা হয়।

ইউরোপ

ইউরোপেও অনেক দেশের স্থানীয় নাম ইংরেজি নামের চেয়ে ভিন্ন। যেমন, আলবেনিয়াকে স্থানীয়রা ‘শ্কিপেরি’ নামে ডাকে, যা ‘শ্কিপতার’ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হতে পারে ‘পরিষ্কারভাবে কথা বলা’ অথবা দেশটির জাতীয় প্রতীক ‘ঈগল’।

হাঙ্গেরিকে স্থানীয় ভাষায় ‘মজয়রোরসাগ’ বলা হয়, যেখানে ‘মজয়র’ বলতে হাঙ্গেরীয় জনগণকে বোঝানো হয় এবং ‘ওরসাগ’ অর্থ ‘দেশ’। ইউক্রেন নামটি এসেছে পুরোনো স্লাভিক শব্দ ‘উক্রাইনা’ থেকে, যার অর্থ ‘সীমান্তভূমি’। এটি দেশটির ইতিহাসে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের সীমান্তবর্তী অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।

উত্তর ও মধ্য আমেরিকা

উত্তর ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর নাম প্রধানত ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাবে গঠিত হয়েছে, বিশেষত স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও পর্তুগালের উপনিবেশায়নের মাধ্যমে।

যেমন, বাহামার নাম এসেছে স্প্যানিশ ‘বাহা মার’ থেকে, যার অর্থ ‘নিম্ন সমুদ্র’। কোস্টারিকার স্প্যানিশ অর্থ ‘সমৃদ্ধ উপকূল’। ১৫০২ সালে কলম্বাস এখানে পৌঁছে প্রচুর স্বর্ণ ও সম্পদের সন্ধান পান। এটি মাথায় রেখেই দেশটির এমন নামকরণ হয়েছিল।

মেক্সিকো নামটি নাহুয়াতল ভাষার ‘মেহিকো’ শব্দ থেকে এসেছে, যা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল তেনোচতিতলানের (বর্তমান মেক্সিকো সিটি) জন্য ব্যবহৃত হতো। এর অর্থ ‘মেক্সিকা জনগণের স্থান’, যা দেশটির গভীর আদিবাসী ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।

ওশেনিয়া

ওশেনিয়ার ১৪টি দেশের স্থানীয় নাম ইংরেজি ভাষায়ও ব্যবহৃত হয়, তবে বানানে কিছু পার্থক্য থাকে। অস্ট্রেলিয়ার নাম লাতিন ‘অস্ট্রালিস’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘দক্ষিণ’। দেশটি দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ায় নামটি যথাযথ বিবেচিত হয়। নিউজিল্যান্ডের মাওরি নাম ‘আওতেয়ারোয়া’, যার অর্থ ‘লম্বা সাদা মেঘের দেশ’। টোঙ্গা নামটি টোঙ্গান ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘দক্ষিণ’ বা ‘দক্ষিণের দেশ’।

দক্ষিণ আমেরিকা

একসময় দক্ষিণ আমেরিকায় ১,০০০-এরও বেশি ভাষা প্রচলিত ছিল, তবে বর্তমানে ১২টি দেশের মধ্যে কেবল ২০০ থেকে ৪০০ ভাষা টিকে আছে। মহাদেশটিতে বিশ্বের মোট স্বাদুপানির এক-চতুর্থাংশের বেশি মজুত রয়েছে, এবং এখানকার অনেক দেশের নাম জলসম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, গায়ানার নাম এসেছে আদিবাসী শব্দ ‘গুইয়ানা’ থেকে, যার অর্থ ‘জলের দেশ’। এটি দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ যেখানে ইংরেজি সরকারি ভাষা। প্যারাগুয়ের নাম এসেছে গুয়ারানি ভাষার ‘পার’ (নদী) এবং ‘গুয়াই’ (এই পাশ) শব্দ থেকে। উরুগুয়ের নামও গুয়ারানি ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ হতে পারে ‘রঙিন পাখির নদী’ বা ‘রঙিন শামুকের নদী’।

ভেনেজুয়েলার নাম এসেছে ইতালিয়ান ‘ভেনেজিওলা’ থেকে, যার অর্থ ‘ছোট ভেনিস’। স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা লেক মারাকাইবো অঞ্চলে আদিবাসীদের খুঁটির ওপর নির্মিত ঘর দেখে একে ভেনিস শহরের সঙ্গে তুলনা করেন, এবং সেই থেকে নামটির উৎপত্তি।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us