অর্থনৈতিক সংস্কার ও বাজার উদারীকরণের মধ্য দিয়ে এক দশক ধরে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম। মাত্র কয়েক দশক আগেও দেশটির অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। কিন্তু বর্তমানে শিল্পভিত্তিক দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করেছে ভিয়েতনাম। এ ছাড়া পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। পরের অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম কয়েক মাস ধরে চীনের কাছাকাছি রপ্তানি করছিল। অবশেষে গত এপ্রিল শেষে এই বাজারে চীনকে টপকে শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক হয়ে গেছে ভিয়েতনাম। অন্যদিকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবেই কমছে।
মন্দায়ও বিনিয়োগ টানছে ভিয়েতনামইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চীন ও ভিয়েতনাম থেকেই প্রায় ৪০ শতাংশ তৈরি পোশাক আমদানি করছে। আর বাংলাদেশ থেকে ৯ শতাংশ।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৭৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে চীন ৪৩২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। একই সময়ে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ৪৩৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার মানে, চীনের থেকে ছয় কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। বছরের প্রথম চার মাসে ভিয়েতনাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.৩১ শতাংশ বেশি রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে চীনের রপ্তানি কমেছে ৪.৪৩ শতাংশ।
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ভিয়েতনামের অর্থনীতি ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৪ শতাংশ। যেখানে ২০২৩ সালে এ হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। এর পাশাপাশি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শিল্প উৎপাদন বেড়েছে ৭.৫ শতাংশ।
ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও বিদেশি বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। গত ২০ জুন পর্যন্ত ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১৩.১ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১৫.১৯ বিলিয়ন ডলার। এই সময় বিদেশি বিনিয়োগের এক হাজার ৫৩৮টি নতুন প্রকল্পের নিবন্ধন হয়েছে।
দেশটির স্থানীয় মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, উৎপাদন খাতে ১০.৬৯ বিলিয়ন ডলারসহ সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে, যা মোট বিনিয়োগের ৭০.৪ শতাংশ।
ভিয়েতনামে বিনিয়োগকারী ৮৪টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে সিঙ্গাপুর ৫.৫৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যা মোট বিনিয়োগের ৩৬.৭ শতাংশ। এরপর জাপান করেছে ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ১১.৪ শতাংশ।
ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে দেশটির উৎপাদন খাত, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের কৌশলগত অবস্থান। এসবের কারণে দেশটির অর্থনীতি শুধু বাড়ছেই না, বরং সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই সমৃদ্ধির পেছনে কেবল কোনো ঘটনায় নয়; আছে নীতি উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তাদের অব্যাহত চেষ্টা। দেশটি এখন কেন্দ্রীভূত অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে বাজারমুখী অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
ভিয়েতনামে বিদেশি পর্যটক বেড়েছে ৫৮ শতাংশ
অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যায়ণের অংশ হিসেবে পর্যটন খাতকেও সমৃদ্ধ করে তুলছে ভিয়েতনাম। ফলে এশিয়ার ভ্রমণ তালিকায় নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ দেশটি। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ভিয়েতনাম ন্যাশনাল অথরিটি অব ট্যুরিজম (ভিএনএটি) জানায়, জানুয়ারি থেকে জুন ছয় মাসে দেশটি ৮৮ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে ৫৮.৪ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া করোনা-পূর্ববর্তী ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে এ সংখ্যা ৪.১ শতাংশ বেশি। ২০০৭ সালে দেশটির জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৪.৭ শতাংশ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন