রাস্টবেল্ট অঞ্চলের ভোটারদের সমর্থন লাভে চীনবিরোধী নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই পদক্ষেপ হলো মেক্সিকো হয়ে আসা চীনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম–জাতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত।
হোয়াইট হাউস বলেছে, যে ইস্পাত উত্তর আমেরিকায় গলানো ও তৈরি করা হয়নি, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে সেই ইস্পাতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা অ্যালুমিনিয়ামে যদি চীন, বেলারুশ, ইরান ও রাশিয়ায় তৈরি প্রাথমিক উপাদান থাকে, তাহলে তার ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভালো অবস্থায় নেই।
রাস্টবেল্ট হিসেবে যা এখন পরিচিত, তা একসময় যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পাঞ্চল ছিল। কয়েকটি রাজ্যজুড়ে এর অবস্থান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেখানকার সব কারখানা চীনে চলে যাওয়ায় শিল্পের স্থাপনাগুলো পরিত্যক্ত পড়ে আছে, লোহালক্কড়ে জং ধরেছে। সে জন্য এই এলাকা চিহ্নিত হয়েছে রাস্টবেল্ট নামে। এই অঞ্চলের ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
সংবাদে বলা হয়েছে, রাস্টবেল্ট অঞ্চলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মাঠ হারাচ্ছেন বাইডেন। সে জন্য এই অঞ্চলের ভোটারদের মন পেতে তিনি চীনের বিভিন্ন পণ্যে একের পর এক শুল্ক আরোপ করে যাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন উচ্চতায় উঠছে।
বাইডেনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা লায়েল ব্রাইনার্ড বলেন, মেক্সিকো হয়ে চীনের যে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামপণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, সেখানে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পেনসিলভানিয়া ও ওহাইওর মতো রাজ্যে শ্রমিকদের ক্ষতি হচ্ছে।
বিভিন্নভাবে জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরির চেষ্টা করছেন জো বাইডেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে জাপানের নিপ্পন স্টিল ইউএস স্টিল কেনার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু বাইডেন এই প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন। মার্কিন ইস্পাতকর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় এটা করা হয়েছে, বিষয়টি এভাবেই উপস্থাপন করেন জো বাইডেন। পেনসিলভানিয়া রাজ্যের পিটসবার্গে এই ইউএস স্টিলের অবস্থান। এই রাজ্য দেশটির দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।
চলতি বছরের মে মাসে চীনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামপণ্যে শুল্ক তিন গুণ করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবার ঘুরপথে যেসব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামপণ্য মার্কিন বাজারে প্রবেশ করে, সেগুলোতেও শুল্ক আরোপ করা হলো।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে এই শুল্ক কার্যকর করা হবে। মেক্সিকো যেটা করবে, সেটা হলো, আমদানিকারকদের কাছ থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামপণ্যের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া বা এই বিষয়গুলো আরও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন টাই ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, এই সিদ্ধান্ত মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্র—উভয় দেশের ইস্পাতকর্মীদের জন্য ভালো হবে।
তবে এই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি ইস্পাতপণ্যে যে শুল্ক আরোপিত হবে, তা নয়। সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে প্রতিবছর ৩৮ লাখ টন ইস্পাত আমদানি করে; এর মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ ইস্পাত উত্তর আমেরিকার বাইরে গলানো হয়। অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে সেটা আরও কম, ১ লাখ ৫ হাজার টন। অ্যালুমিনিয়ামের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম এই শুল্কের আওতায় আসবে।
বাইডেনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ব্রেইনার্ড আরও বলেন, চীন নিজের চাহিদাসহ সারা দুনিয়ার চাহিদার চেয়েও বেশি ইস্পাত উৎপাদন করছে। এই অতিরিক্ত উৎপাদনের আংশিক কারণ হচ্ছে ভর্তুকি। এতে যা হচ্ছে, তা হলো ইস্পাতের দাম অনেকটা কমে যাচ্ছে এবং সেই কম দামে বিপুল পরিমাণ ইস্পাত সারা বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে।
শুধু ইস্পাত নয়, চীনে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিপণ্যেও শুল্কহার বাড়িয়েছে বাইডেন সরকার। যেমন চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি শুল্ক ৪ গুণ করে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা, সৌর প্যানেলের শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা এবং সেই সঙ্গে ২০২৫ সাল থেকে চীনের তৈরি চিপে শুল্কহার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সরকার।
সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন