যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক অদ্ভুত ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে চলেছেন। পানামার কাছ থেকে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর এবার ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি। গতকাল রোববার পেপালের সহপ্রতিষ্ঠাতা কেন হাওয়ারিকে ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার সময় গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাম্প।
সোমাবার (২৩ ডিসেম্বর) ব্রিটেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এতথ্য নিশ্চিত করেছে। গ্রিনল্যান্ডের দিকে নজর ট্রাম্পের এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদের সময় গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে ওই সময় ডেনমার্ক তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
গ্রিনল্যান্ড কেনার পেছনে ট্রাম্পের আগ্রহের পেছনে রয়েছে দ্বীপটির প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব। তবে ওই সময় ডেনমার্কের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাঁদের রাষ্ট্রের অংশ এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বিক্রির জন্য নয়।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেত্তে ফেডেরিকসেন বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রি হবে না। গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ক নয়। গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডেরই। আমি আশা করি, ট্রাম্প সত্যি সত্যি এটা কেনার কথা বলেননি।’ ফেডেরিকসেনের মন্তব্যের পাল্টা হিসেবে তখন ট্রাম্প ডেনমার্কে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করেন।
২০২০ সালে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে গ্রিনল্যান্ড কেনার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে তাঁর প্রশাসন। আগামী জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই আবার গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রকল্পটি তুলে ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, এটা এখনো তাঁর নজরেই রয়েছে।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ একটি অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা। তিনি ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিষয়ে আরও লেখেন, কেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে একটি চমৎকার কাজ করবেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড। এর ৮০ শতাংশ অঞ্চল তুষারাবৃত। মাত্র ৬০ হাজার লোকের বাস এই দ্বীপে। এমন একটি জায়গা কী কারণে কিনতে চান, সে বিষয়ে ট্রাম্প নিজে মুখ ফুটে কিছু বলেননি। তবে এই ক্রয়ের পেছনে কয়েকটি স্পষ্ট কারণের কথা তুলে ধরেছেন বিশ্লেষেকরা। এগুলোর একটি হলো প্রাকৃতিক সম্পদ। গ্রিনল্যান্ড বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। লোহা, আকরিক, সিসা, দস্তা, হীরা, সোনা, ইউরেনিয়াম ও তেল—বিরল সব প্রাকৃতিক উপাদানের কী নেই সেখানে! দ্বীপটির বেশির ভাগ এলাকা তুষারাবৃত থাকায় স্থানগুলো কেউ এখনো ব্যবহার করতে পারেনি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দ্বীপটির বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। দ্বীপটির বরফ গলার ফলে সেখানকার ভূমি ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের অপার সম্ভাবনাও উন্মোচিত হবে। এ কারণেই ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনায় ঝুঁকতে পারেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডেনমার্কের ওই দ্বীপ কেনার পেছনে ভূরাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ‘ঠুলে এয়ার বেস’ নামের একটি সেনাঘাঁটি স্থাপন করেছে। আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে ৭০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত ওই সেনাঘাঁটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। সেখানে একটি রাডার স্টেশন রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রিম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কব্যবস্থার একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্স স্পেস কমান্ড ও নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ডও সামরিক ঘাঁটিটি ব্যবহার করে থাকে। ইউরোপে সামরিক শক্তি বাড়াতে গ্রিনল্যান্ড কেনার চিন্তাভাবনা করতে পারেন ট্রাম্প।
গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টার পেছনে আরেকটি কারণ হতে পারে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার জাহির। অন্য দেশের সম্পদ কেনাকে প্রেসিডেন্টের বাড়তি দক্ষতা হিসেবে দেখা হয় মার্কিন মুলুকে। তাই গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে নিজের পকেটে পুরতে চান। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান ট্রাম্প; প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা, অন্যদিকে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেওয়া।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন