হওয়েল জানান, নানা ফিল্ডে দক্ষ শিক্ষকেরা ঘণ্টার হাজার ডলার পর্যন্ত চার্জ করে থাকেন। এতে কয়েকজনের আয় মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। ক্যারিয়ারের কয়েক বছর ফাইনান্স সেক্টরে কাজ করেছিলেন স্টিভেন মেনকিং। নিউ ইয়র্কে ইকুয়িটি ট্রেডার হিসেবেও যুক্ত ছিলেন। তবে এই কাজে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। এই সেক্টরে তার যোগ্যতার অভাব ছিল বিষয়টি এমনও নয়।
মেনকিং উইলিয়ামস কলেজ থেকে গণিত ও অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেছে। এরপর ব্যাংকিং সেক্টরে বেশ কয়েকটি ইন্টার্নও করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন যে, কাজটি তিনি উপভোগ করছেন না। জীবনের প্রথম দিকের ক্যারিয়ারের সহকর্মীদের সম্পর্কে মেনকিং বলেন, “তাদের যদি ছোট ছোট বাচ্চা থাকে, তবে আমি জানিনা ওদেরকে তারা কতটুকু সময় দিতে পারছেন। সবাই নিজের জন্য যেটা ভালো মনে হয় সেই সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকেন। আমি সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর মতো বিষয়টি বিসর্জন দিতে চাইনি।”
সেক্ষেত্রে মেনকিং ব্যাংকিং পেশা ছেড়ে গণিতের একজন টিউটর হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন। বিভিন্ন এজেন্সিতে খোঁজের পর তিনি ফোরাম এডুকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান লাভ করেন। কোম্পানিটি মূলত নিউ ইয়র্কের ধনী পরিবারগুলোর বাচ্চাদের টিউটর সার্ভিস দিয়ে থাকে।
বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সি মেনকিং ফোরামের শীর্ষ পাঁচ আয় করা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বছরে প্রায় ৫ লাখ ডলার আয় করেন। ফুল টাইম টিউটর হিসেবে যা কি-না তার পূর্ববর্তী পেশার চেয়ে বহুলাংশে বেশি।
টিউটর পেশাটিকে দীর্ঘদিন ধরে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে দেখা হতো। এক দশক আগে দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অনেকটা এমনটাই বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে টিউশনের ক্ষেত্রটি অনেক বেশি প্রসারিত হয়েছে।
গ্র্যান্ড ভ্যালি রিসার্চের তথ্যমতে, চলতি বছর টিউশন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক আয় প্রায় ১০.৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাজারে বহু এডটেক ভেঞ্চারও ব্যবসার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে একটি টিউটরিং কোম্পানিকে সফল হতে হলে তাদের ভিন্নধর্মী কিছু প্রস্তাব করতে হবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফোরাম সেটিই করছে।
ফোরামের যাত্রা শুরু আগে প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও থমাস হওয়েল নিজেই একজন টিউটর ছিলেন। ২০০৮ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতক লাভের পর তিনি নিউ ইয়র্কের হাই-স্কুলের বাচ্চাদের গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি নানা বিষয় পড়িয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি ঘণ্টার ৪৫ ডলার করে চার্জ নিতেন। যেখানে এজেন্সিগুলো প্রায় ২০০ ডলার চার্জ করে থাকেন।
ফোরামের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও থমাসের কলেজ রুমমেট ডেভিড ফেলপ্সও টিউটর হিসেবে আয় করছেন। থমাস বলেন, “এমন একটা সময় ছিল যখন আমি একসাথে সাতটা এজেন্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। সেটি ভাবলেই রোমাঞ্চিত হই। আমাকে পাঠ্যদানে চ্যালেঞ্জ রয়েছে এমন অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াতে হয়েছিল।”
নিজেদের ৮ হাজার ডলারের সেভিংস দিয়ে হওয়েল ও ফেলপ্স ২০১৪ সালে টিউটরিং এজেন্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। হওয়েল বলেন, “আপনি টিউশনকে খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে ধরে নিলে একমুখী চিন্তা করবেন। আর এটাকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে ভাবলে একটি ব্যবসার মতো করে নানাভাবে চিন্তা করবেন। ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা দ্বিতীয়টিই ভেবেছিলাম। এই মডেলে আমরা স্টাফ না খুঁজে বরং মেধাবীদের খুঁজছিলাম। কেননা টিউটররাই আমার কোম্পানির আসল সম্পদ।”
স্বাধীনভাবে টিউশন করিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেককেই ফোরামে সময়ের সাথে সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ক্লায়েন্টের চাহিদামতো ক্লায়েন্ট সরবারাহ করে থাকে ও পেমেন্টের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে। আর এটি থেকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফোরাম ১৫ শতাংশ চার্জ কেটে নেয়।
হওয়েল দাবি করেন, ভার্জিনিয়া ভিত্তিক কে১২ টিউটরিং প্ল্যাটফর্ম চার্জ হিসেবে ২০ থেকে ২৫ ভাগ চার্জ রেখে থাকেন। যা তারা অনলাইন, মার্কেটিং, সেলস ও অপারেশনে ব্যয় করেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার জিন মুরে।
কে১২ এর বেশিরভাগ টিউটরই খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করে ঘণ্টায় ৩৮ থেকে ৬৫ ডলার পর্যন্ত আয় করেন। সেক্ষেত্রে তারা বছরে ৫,৮০০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৫৩,৮০০ ডলার পর্যন্ত আয় করেন। আর ফোরামে একজন শিক্ষক বছরে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ডলারও আয় করে থাকেন। দক্ষতা ও পড়ানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের ওপর ভিত্তি করে এতে তারতম্য হতে পারে।
হওয়েল জানান, নানা ফিল্ডে দক্ষ শিক্ষকেরা ঘণ্টার হাজার ডলার পর্যন্ত চার্জ করে থাকেন। এতে কয়েকজনের আয় মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। তবে তিনি ফোরামের আয়ের ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি। ফোর্বসের অনুমান মতে, প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১০ মিলিয়নের মতো আয় করছে।
ফোরামের টিমে ৩৫ জন টিউটর রয়েছে; যাদের রয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যাকগ্রাউন্ড। কারো হয়তো মেনকিংয়ের মতো পড়ানোর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে আবার অন্যদের হয়তো অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি টিউটর নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ যাচাই-বাছাই করে থাকেন। টিউটরদের অ্যাপ্লাই করার আগে পড়ানোর অন্তত তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। এরপর বেশ কয়েকটি মক টেস্ট নেবার পর তারা টিউটর সিলেক্ট করেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে এখন পর্যন্ত ২ হাজার টিউটর আবেদন করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে নেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ জনকে। অর্থাৎ, আবেদনের পর চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ২ শতাংশ। যা কি-না হার্ভার্ডে আবেদন গ্রহণের সম্ভাবনার চেয়েও কম।
ফোরামের একজন ক্লায়েন্ট তার কলেজ পড়ুয়া সন্তানের টিউটরিংয়ের পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অভিভাবক জানান, তিনি বাচ্চাদের প্রাইমারি স্কুল থেকেই এই সেবা নিয়ে থাকেন। সন্তানদের পড়াতে বর্তমানে তিনি ঘণ্টায় ৪০০ থেকে এক হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করেন।
তিনি বলেন, “আমার স্বামী ও আমার জন্য এটি অনেক বেশি উপকারী। আমি ওদের প্রত্যেককেই ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমাদের সন্তানদের বেশ সহযোগিতা হয় বিধায় আমি ওদের খুশিমনেই পেমেন্ট করি।”
হওয়েল বলেন, “আমাদের সেবা নেওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিউ ইয়র্কের প্রাইভেট স্কুলে পড়াশোনা করেন। আর সেইসব অভিভাবকেরাই পড়াতে আগ্রহী হন যারা কি-না তাদের সন্তানদের সেরা শিক্ষক দিয়ে পড়াতে অর্থ খরচ করতে চান।”
এডুকেশনডেটার তথ্যমতে, নিউ ইয়র্কের সেকেন্ডারি লেভেলের প্রাইভেট স্কুলের ফি প্রতি বছরে গড়ে ২৭,৩২২ ডলার। আর বিখ্যাত সব প্রাইভেট স্কুলে ফি ৬০ হাজারেরও বেশি। তাই, ফোরামের টিউটর হয়তো বেশিরভাগ পরিবারের পক্ষেই রাখা সম্ভব হবে না। তবে যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, তাদের জন্য এটি বেশ ভালো সুযোগ বলে মনে করেন হওয়েল।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন