২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক হতে যাচ্ছে সৌদি আরব। আর এই মেগা ইভেন্ট দেশটির অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ কৌশলে আরো বেশি গতির সঞ্চার করবে বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা। সৌদি আরবের আবাসন, অবকাঠামো ও পর্যটন খাতে বাড়তি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটি সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে জ্বালানি তেলনির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য খাতে আরো জোর দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তার অংশ হিসেবেই বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে দেশটিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পর্যটন খাত ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হবে।
লেবাননের বাইব্লোস ব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ নাসিব ঘোব্রিল জানান, স্টেডিয়াম ও বিশ্বকাপ-সংক্রান্ত অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে সম্পত্তি খাতে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি সৌদি জিডিপিকে বছরে ৫ শতাংশের বেশি উন্নীত করতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে দেশটির জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাত ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর ৪-৫ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০২৪ সালে সৌদি আরবে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪ এবং ২০২৫ সালে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। ঘোব্রিল বলেন, ‘ফিফা বিশ্বকাপ সংযোজনের ফলে এ (প্রবৃদ্ধি) প্রবণতা আরো ত্বরান্বিত হবে। কারণ অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরো বাড়িয়ে তুলবে।’ তিনি ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে আনেন, যা দেশটির অর্থনীতিকে ওই বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বার্ষিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছিল।
গত মাসে রিয়াদের ৯২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কিং সালমান স্টেডিয়ামের ডিজাইন পরিকল্পনা উন্মোচন করা হয়েছে। এ স্টেডিয়ামে ২০৩৪ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। এটি বিশ্বকাপের জন্য নির্ধারিত ১৫টি স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি। চারটি এরই মধ্যেই নির্মিত হয়েছে, তিনটি নির্মাণাধীন এবং আটটি পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়া ১ লাখ ৮৫ হাজার হোটেল কক্ষ তৈরি বা সংস্কার করা হবে। ঘোব্রিল বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে পর্যাপ্ত সময় থাকায় সৌদি কর্তৃপক্ষের জন্য প্রস্তুতি নেয়া সহজ হবে। এছাড়া বিশ্বকাপের সঙ্গে সম্পর্কিত নতুন অবকাঠামো, যেমন রাস্তা ও হোটেল নির্মাণ করা হবে, যা ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনার আওতায় প্রায় ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে যোগ হবে।’
সম্পত্তি খাতের পরামর্শক সংস্থা সিবিআরইর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের গবেষণাপ্রধান ম্যাথিউ গ্রিন বলেন, ‘এই ইভেন্ট (ফিফা বিশ্বকাপ) ব্যবসায়িক ও অবকাশ পর্যটনের দিক থেকে সৌদি আরবে বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব মূলত দেশের অবকাঠামোর ওপর পড়বে, যা প্রতিযোগিতার কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।’
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রচুর হোটেল কক্ষ নির্মাণ হবে। বিভিন্ন দাম ও মানের এসব হোটেল নির্মাণ সৌদি আরবকে আরো লাভবান হতে সাহায্য করবে। একইভাবে দোহার বিশ্বকাপের পর তা উপসাগরীয় অঞ্চলের আতিথেয়তার সবচেয়ে সাশ্রয়ী ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ব্রোকার সংস্থা এক্সটিবি মেনার বাজার বিশ্লেষক মিলাদ আজার বলেন, ‘বিশ্বকাপের কারণে সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দার মতো শহরে আবাসন বাজারের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হবে। এছাড়া প্রিমিয়াম রেসিডেন্সি ভিসার কারণে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। এসব উদ্যোগ সৌদি আরবের অবস্থানকে এ অঞ্চলে আরো উন্নত করবে।’ (খবরঃ দ্য ন্যাশনাল)।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন