বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি খাতের বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী করতে অন্তত ২৭০ মিলিয়ন বা ২৭ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। সম্প্রতি দেশটির ফেডারেল সরকার প্রকাশিত এক নথি থেকে এ বিষয়টি জানা গেছে । এর ফলে ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দাতা হয়ে উঠেছেন।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। তিনি ট্রাম্পের প্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এবং ট্রাম্পের সমাবেশগুলোয় ভাষণ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওপেনসিক্রেটসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইলন মাস্কের দেয়া এই পরিমাণ অনুদানের কারণে তিনি ২০১০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মাস্ক এই নির্বাচনী চক্রে ট্রাম্পের আরেক সমর্থক টিম মেলনকে ছাড়িয়ে গেছেন। মেলন প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায়।
ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা নথি অনুযায়ী, মাস্ক তাঁর প্রতিষ্ঠিত আমেরিকা পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটিতে ট্রাম্পকে সমর্থন করতে ২৩৮ মিলিয়ন বা ২৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার দান করেছেন। এছাড়া আরও ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার আরবিজি পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি নামের একটি গোষ্ঠীকে দেয়া হয়েছে। এটি গর্ভপাত নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানকে কিছুটা সহনীয় করতে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে।
মাস্ক গত নভেম্বরের ট্রাম্পের নির্বাচনী জয়ের পর থেকেই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। এমনকি তিনি তাকে তাঁর স্পেসএক্স কোম্পানির একটি রকেট উৎক্ষেপণ দেখার জন্য টেক্সাসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জয়ের পর পরিবারের সদস্যদের মতো ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মাস্ক। ফ্লোরিডায় পাম বিচে নিজ বাসভবন ‘মার-এ-লাগো’–তে ট্রাম্প বলেন, তার (মাস্ক) এখানে থাকাটা আমি উপভোগ করি। তিনি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। তিনি অবিশ্বাস্য একজন মানুষ। আমি তাকে বাড়ির বাইরে রাখতে পারি না। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ও আর্থিক সংস্থা ক্যান্টর ফিটজেরাল্ডের প্রধান নির্বাহী হাওয়ার্ড লাটনিককে বাণিজ্যমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিতে সবার সামনেই সুপারিশ করেন মাস্ক। লাটনিককে এ পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। এতে করে ট্রাম্পের ওপর মাস্কের প্রভাব কতটা গভীর, সেটাই তুলে ধরে।
ট্রাম্প মাস্কের অনুদানের স্বীকৃতি হোক বা না হোক তাঁকে সরকারি কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে মনোনীত করেছেন। তবে দুজনের এই উষ্ণ সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে কিছু নীতিগত বিষয়, যা নিয়ে দুজনের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া পার্থক্যও প্রবল। যেমন মাস্ক তাঁর পাগলাটে অভ্যাসের জন্য বিখ্যাত। নিজের কোম্পানিগুলোকে তিনি ব্যক্তিগত জমিদারির মতো ব্যবহার করেন, যেখানে তাঁর কর্তৃত্বকে সাধারণত কেউ চ্যালেঞ্জই করতে পারেন না। কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ থেকে শুরু করে দাপ্তরিক বৈঠক—সবখানেই মাস্ককে একই মেজাজে দেখা যায়। তাকে কর্মীদের বিনা নোটিশেই চাকরিচ্যুত করতে এবং সবার সামনেই বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অপমান করতে দেখা গেছে। ট্রাম্পও নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হুটহাট করে কর্মী ছাঁটাই করেন। সবার সামনেই কর্মীদের অপমান করে থাকেন। কর্মীদের সম্পূর্ণ আনুগত্য চান তিনি। ট্রাম্পের সাবেক সহযোগীরা বলেছেন, তিনি তাঁর উপদেষ্টা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। তবে মূল পার্থক্য হচ্ছে, তাকে অতীতে অন্যদের সঙ্গে খ্যাতির ছটা ভাগাভাগি করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
]উল্লেখ্য, প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সালে মাস্ককে নিজের ব্যবসা–বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদে রেখেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা-বিষয়ক প্যারিস চুক্তি-২০১৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে মাস্ক ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
খবর: এপি।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন