দাম বাড়ানোর ক্ষমতা কমছে মার্কিন ভোক্তাপণ্য কোম্পানিগুলোর – The Finance BD
 ঢাকা     বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

দাম বাড়ানোর ক্ষমতা কমছে মার্কিন ভোক্তাপণ্য কোম্পানিগুলোর

  • ০৮/০৭/২০২৪

মূল্যস্ফীতির কারণে মার্কিন ক্রেতাদের বড় অংশের কেনাকাটার অভ্যাসে পরিবর্তন ঘটেছে। তারা সস্তা পণ্য খোঁজার পাশাপাশি নিতান্ত বাধ্য না হলে বাইরে খাওয়া-দাওয়া এড়িয়ে চলছে, যা দেশটির ব্যবসার বিস্তৃত ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে। এ কারণে অনেক জায়ান্ট কোম্পানি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষমতা হারাতে বসেছে। এর বদলে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা করছে। উল্টো দিকে বিষয়টি মূল্যস্ফীতিপিষ্ট ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, একসময় বছরের পর বছর যে কোম্পানিগুলো পণ্যের দাম বাড়িয়ে এসেছে, এখন অনিচ্ছুকভাবে হলেও ছাড় দিচ্ছে। ছাড়ের বিভিন্ন ধরনের কুপন সরবরাহের পাশাপাশি দোকানের তাকে পণ্য সাজানোয় কোম্পানিগুলোকে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
এখন অনেক মার্কিন পরিবার মিতব্যয়িতাকে অভ্যাস করে নিয়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলো ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে কোম্পানিগুলোর সামনে বিস্তৃত বাজার ধরে রাখতে দাম কমানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের।
বাজার বিশ্লেষক সংস্থা নেলসন আইকিউয়ের দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুনে শেষ হওয়া ১২ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ পণ্যে মূল্যছাড় ও অন্যান্য অফার ছিল। এ প্রবণতা তিন বছর আগেও ছিল ২৫ দশমিক ১ শতাংশ। এমনকি আমেরিকান অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার ইউরোপেও মূল্যছাড়ের প্রবণতা বেড়েছে।
চিরিওস ও অন্যান্য ব্রেকফাস্ট সেরিয়ালের জন্য পরিচিত জেনারেল মিল নতুন অর্থবছরে মূল্যছাড়ের কুপন বাবদ ২০ শতাংশ বেশি ব্যয় করছে। গত মাসে কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী জেফ হারমেনিং জানিয়েছিলেন, কিছু ক্ষেত্রে চলমান আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
রিটজ ক্র্যাকারস ও টোবলেরন চকোলেটের মতো পরিচিত খাদ্যপণ্যের নির্মাতা মন্ডেলেজ যুক্তরাষ্ট্রে চ্যালেঞ্জপূর্ণ বছর পার করতে চলেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিক্রি ক্রমেই কমছে। জুনে এক সম্মেলনে বিষয়টি উল্লেখ করেন মন্ডেলেজের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা লুকা জারামেলা। এছাড়া অন্যান্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সম্প্রতি স্টোরকেন্দ্রিক ব্র্যান্ডগুলো কোম্পানিটির জনপ্রিয় চিপস আহয় কুকিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এ কারণে মন্ডেলেজ বড় আকারের ছাড় হিসেবে কিছু পণ্যের দাম ৪ ডলারের নিচে রাখছে।
চলতি বছর মার্কিন শেয়ারবাজারে খুচরা ও বিনোদন খাত এবং খাদ্য ও গৃহস্থালির কোম্পানি উভয়ই সূচকের রেকর্ড ব্রেকিং পারফরম্যান্সে প্রধান অবদান রেখেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর মধ্যে উভয় খাতই উল্লেখযোগ্য মুনাফা অর্জন করেছে, প্রতিটি খাতের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি, যা ভোক্তাপণ্য বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের দৃঢ় আগ্রহ ও আশাবাদ তুলে ধরে।
ইন্টারেক্টিভ ব্রোকারসের প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ সোসনিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে দুই-তৃতীয়াংশে অবদান রাখে ভোক্তা ব্যয়। কিন্তু ভোক্তারা যদি পরিস্থিতিকে কঠিন মনে করেন ও আরো মূল্য সচেতন হয়ে ওঠেন তাহলে ভোক্তাপণ্য স্টকগুলো প্রভাবিত হবে। কারণ এটি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে ভোক্তাদের মিতব্যয়িতা সরাসরি চাক্ষুষ হয়। গত সপ্তাহে ড্রাগস্টোর চেইন ওয়ালগ্রিনস বুটস অ্যালায়েন্স সতর্ক করে জানায়, ভোক্তারা এখন আগের চেয়ে বেশি খুঁতখুঁতে। এ কারণে প্রচার ও মূল্যছাড় বিষয়ে আরো বেশি বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ওয়ালগ্রিনসের শেয়ারদরে চলতি বছর ৫৭ শতাংশ পতন ঘটেছে।
গত সপ্তাহে স্পোর্টসওয়্যার জায়ান্ট নাইকির শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাথু ফ্রেন্ড ক্রেতাদের আর্থিক চাপ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে উত্তর আমেরিকায় কোম্পানির আয় কমে গেছে। এখন ক্রেতা আকর্ষণে ১০০ ডলারের চেয়ে কম দামের জুতা বাজারে আনার পরিকল্পনা করছেন।
নেলসন আইকিউর ভাইস প্রেসিডেন্ট কারম্যান এলিসন জানান, মার্কিন স্টোরগুলোয় বিভিন্ন অফার দেয়া আইটেমের সংখ্যা চলতি বছর ৬ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর কারণ হলো মূল্য বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতকারক ও খুচরা বিক্রেতাদের ক্ষমতা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভোক্তারা তাদের মানিব্যাগের ওপর ভিত্তি করে কী কিনবে তা ঠিক করছে। মূল্য যদি খুব আগ্রাসীভাবে বেড়ে যায়, তবে অনেক সময় তারা ব্র্যান্ড পরিবর্তন করে। তারা দোকানও পাল্টে ফেলবে।’
অবশ্য পণ্যমূল্যের এ পতনশীল অবস্থা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে দাবি অনেক কোম্পানির। যেমন ফুট লকারের প্রধান নির্বাহী মেরি ডিলন সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাদের গ্রাহকরা সম্পূর্ণ মূল্য দিতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে গৃহস্থালি পণ্যের জায়ান্ট প্রক্টর অ্যান্ড গাম্বলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা আন্দ্রে শুল্টেন বলেছেন, তাদের গ্রাহকরা নির্ভরযোগ্য ও সুপরিচিত ব্র্যান্ডের বিপরীতে নন-ব্র্যান্ড বিকল্প বেছে নেয়ার পক্ষে নয়। কারণ ডায়াপারের মতো সুরক্ষা পণ্যে ব্যর্থতার খরচ অনেক বেশি।
সূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us