ওয়াশিংটনের বিধিনিষেধের প্রতিশোধ হিসেবে আমেরিকায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রফতানি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। ফলে চলতি বছর রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানীর বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ হতে যাচ্ছে চীন। সম্প্রতি মস্কো থেকে ইউরেনিয়ামের আমদানি তিনগুণের বেশি বাড়িয়েছে দেশটি। এক প্রতিবেদনে রুশ সংবাদমাধ্যম রাশিয়া টুডে (আরটি) এ খবর জানিয়েছে।
আরআইএ নভোস্টির বিশ্লেষণ করা শুল্ক ডেটা অনুযায়ী, ১০ মাসে রাশিয়া থেকে ৮৪৯ মিলিয়ন বা ৮৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কিনেছে চীন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। শুধু অক্টোবরেই দেশটির আমদানি সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিগুণ হয়ে ২১৬ মিলিয়ন বা ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।
একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক জ্বালানী আমদানিকারক হয়ে উঠেছে। দেশটি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ক্রয় বাড়িয়ে ৬৫০ মিলিয়ন বা ৬৫ কোটি ডলারে উন্নীত করেছে।
গত বছর রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানীর প্রধান আমদানিকারক দেশ ছিল আমেরিকা। রাশিয়া থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ক্রয় প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমিয়েছে দেশটি। গত ৯ মাসে ৫৭৪ মিলিয়ন বা ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যের রুশ পরমাণু জ্বালানি আমদানি করে এবার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওয়াশিংটন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে রাশিয়া থেকে স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞার আরোপ করেছিল ওয়াশিংটন। তবে যেসব ক্ষেত্রে দেশটির কোনও বিকল্প নেই কিংবা ‘অ্যামেরিকার জাতীয় স্বার্থে’ বিবেচনায়, সেসব ক্ষেত্রে ২০২৮ সাল পর্যন্ত আমদানিতে অল্প করে ছাড় দেয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ার ইউরেনিয়ামের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিলে স্বাক্ষর করেছেন। রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে রুশ মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি রোসাটম। রাশিয়া থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানি নিষিদ্ধের জন্য প্রণীত মার্কিন আইনকে আমরা বৈষম্যমূলক মনে করি। এ সিদ্ধান্ত বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে রোসাটম আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শিল্পের টেকসই কার্যকারিতার জন্য ধ্বংসাত্মক।
ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে, ২০২২ সালে আমেরিকার শীর্ষ বিদেশি সরবরাহকারী দেশ ছিল রাশিয়া। আমেরিকান বাণিজ্যিক পারমাণবিক চুল্লিগুলোয় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রায় এক চতুর্থাংশ সরবরাহ করতো দেশটি।
ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া হিসেবে গত সপ্তাহে আমেরিকায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রফতানি নিষিদ্ধ করেছে মস্কো।
গত সেপ্টেম্বরে এক সরকারি বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, কিছু দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও খুশি মনে রাশিয়ার সম্পদ ও পণ্য মজুদ করছে। বিশ্ববাজারে ইউরেনিয়ামসহ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঁচামালের রফতানি সীমিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ দেশ রাশিয়া। বিশ্বের মোট পরমাণু সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকই তাদের হাতে। ধারণা করা হয়, বাজারে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রায় ৪০ শতাংশই রাশিয়ার, যা রফতানি মূল্য ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ২৭০ কোটি ডলার। তবে ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, সর্ববৃহৎ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ কাজাখস্তান। এর পরই রয়েছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। ইউরেনিয়াম খুবই দামি একটি ধাতু। পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে এই ধাতু একটি অপরিহার্য উপাদান। জার্মান রসায়নবিদ মার্টিন হাইনরিখ ক্ল্যাপরথ এই ধাতুটি আবিষ্কার করেন ১৭৮৯ সালে। তিনি ইউরেনাস গ্রহের নামে এর নাম রাখেন ইউরেনিয়াম। কারণ তখন ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কারের ঘটনা ছিল সবচেয়ে সাম্প্রতিক। ১৮৯৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানী হেনরি বেকরেল ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন