ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়ন চুক্তিকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বললেন সমালোচকরা – The Finance BD
 ঢাকা     শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন

ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়ন চুক্তিকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বললেন সমালোচকরা

  • ২৫/১১/২০২৪

আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৯-এ ধনী ও দরিদ্র দেশগুলো ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তবে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় অর্থের পরিমাণ ও চুক্তির শর্তগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন পরিবেশকর্মীরা। তারা একে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর কমপক্ষে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার পাবে, যা কম কার্বন অর্থনীতিতে স্থানান্তর এবং চরম আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবেলায় সাহায্য করবে। তবে এর ছোট একটি অংশ অর্থাৎ ৩০ হাজার কোটি ডলার সরাসরি অনুদান ও নিম্ন সুদে ঋণ হিসেবে দেবে উন্নত দেশগুলো। বাকি অর্থ আসবে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর শুল্ক বা বারবার উড়োজাহাজ ভ্রমণের ওপর আরোপিত করের মতো নতুন উৎস থেকে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গবেষণা সংস্থা পাওয়ার শিফট আফ্রিকার পরিচালক মোহাম্মদ অ্যাডো বলেন, “‘এ সম্মেলন উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি বিপর্যয়। মানুষের ও পৃথিবীর জন্য বিশ্বাসঘাতকতা। ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেয় বলে দাবি করলেও তারা শুধু ভবিষ্যতে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সরাসরি অর্থ দেয়নি। চেকটি শুধু মেইলে রয়েছে, কিন্তু দুর্বল দেশগুলোর জীবন ও জীবিকা এখনই হারাচ্ছে।’
দুই সপ্তাহ ধরে বাকুতে চলা কপ২৯ সম্মেলনে দরিদ্র ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো উন্নত দেশ থেকে সরাসরি আরো বেশি অর্থ পেতে তর্ক করেছে। তাদের দাবি, ভারতের মতো বড় উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে ভাগ না করে এ অর্থের বড় অংশ সেসব দেশকে দেয়া হোক, যারা জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত।
এর মধ্যে একটি বৈঠক থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বের হয়ে এসেছিল দুর্বল অর্থনীতির দেশের দুটি পক্ষ অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটস ও দ্য লেস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ। অবশ্য পরে তারা আলোচনায় ফিরে আসে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কয়েক দিন পর এবারের সম্মেলনটি হলো। একে চুক্তি বাস্তবায়নে উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করবেন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোয় জলবায়ু অর্থায়নে তিনি অনিচ্ছুক বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক দেশ মনে করেছে, নতুন আর্থিক চুক্তিতে সম্মত না হয়ে বাকু ছেড়ে যাওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত দেশগুলো জোর দিয়ে বলেছে নিজস্ব বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে তারা আর কোনো প্রস্তাব দিতে পারে না। তবে এক আলোচক উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে জলবায়ু অর্থায়নে অবদান রাখতে ব্যর্থ হলে আমরা সব ঝুঁকি কাঁধে নেব।
ভারত, বলিভিয়া, কিউবা ও নাইজেরিয়ার দরিদ্র দেশগুলো এ চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পরিবেশকর্মীরাও এ চুক্তির সমালোচনা করেছেন। ব্রাজিলের অবসারভাতোরিও ডো ক্লাইমার কর্মকর্তা ক্লাউডিও অ্যাঙ্গেলো বলেছেন, ‘ধনী দেশগুলো ১৫০ বছর ধরে বিশ্বের বায়ুমণ্ডল দখল করেছে, ৩৩ বছর জলবায়ু কর্মসূচিতে বিলম্ব করেছে এবং তিন বছর আলোচনা করেও কোনো বাস্তব অর্থের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এখন তারা একটি অদক্ষ কপ সভাপতির সাহায্যে এবং আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকি ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমন একটি চুক্তি গ্রহণে বাধ্য করছে, যেখানে শুধু নতুন অর্থ নেই এমন নয় বরং ঋণের বোঝা বাড়াতে পারে।’
আয়োজক দেশ আজারবাইজানও এ সম্মেলনের ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। দেশটির রফতানির ৯০ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল এবং এবারের আলোচনায় জীবাশ্ম জ্বালানিসংক্রান্ত স্বার্থ ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান ছিল। সম্মেলনে উপস্থিত কিছু পক্ষ জানায়, সৌদি আরব আলোচনা বাধাগ্রস্ত করতে ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি এক সৌদি কর্মকর্তা পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ ছাড়াই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। এ পেট্রো-রাষ্ট্র বারবার ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়া’ বিষয়টি মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে, যা গত বছরের কপ২৮ সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল।
এ বিষয়ে অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালর রোমান ইউঅ্যালালেন বলেন, ‘এটা প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট ছিল সৌদি আরব ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনকারী দেশগুলো কপ২৮-এ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর গৃহীত ঐতিহাসিক চুক্তিটি দুর্বল করার জন্য সবকিছু করবে। কপ২৯-এ তারা জ্বালানি স্থানান্তরের ওপর কার্যক্রম হ্রাস বাধাগ্রস্ত করতে কৌশল প্রয়োগ করেছে।’ সাধারণত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনে মূল ভূমিকা পালন করে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তবে তারা বাকুতে খুব বেশি প্রকাশ্য ভূমিকা পালন করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল এখনো জো বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত, তবে আসন্ন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে তাদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী, চীন স্বেচ্ছায় জলবায়ু অর্থায়নে অবদান রাখবে, তবে ধনী দেশগুলো বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ দেবে।
গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আনি দাসগুপ্ত বলেন, ‘প্রত্যাশিত প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও বাকুতে আলোচকরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোয় জলবায়ু অর্থের প্রবাহ অন্তত তিন গুণ বাড়াবে। ৩০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য যথেষ্ট নয়, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পদক্ষেপ। এ চুক্তি বোঝায় যে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোয় আরো বেশি অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হবে, যা তাদের ঋণের বোঝা বাড়াবে না।’
খবর : দ্য গার্ডিয়ান।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us