২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন ও পে-টিভি পরিষেবায় ব্যয় বাড়বে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন ও পে-টিভি পরিষেবায় ব্যয় বাড়বে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বছর শেষে এ খাতে ব্যয় দাঁড়াবে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বাজার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড সেমিঅ্যানুয়াল টেলিকম সার্ভিস ট্র্যাকারের প্রতিবেদনে গত সপ্তাহে এ তথ্য উঠে আসে।
সর্বশেষ পূর্বাভাসটি মে মাসে প্রকাশিত আইডিসির পূর্বাভাসের প্রতিবেদনের তুলনায় ১ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। যদি সাম্প্রতিক পূর্বাভাসটি সত্য হয়, তবে উল্লিখিত ২ দশমিক ৪ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধির হার গত ১২ বছরের মধ্যে হবে সর্বোচ্চ। আইডিসি বলছে, টেলিকম বাজারে এ ধীরগতির প্রবৃদ্ধির কারণে অপারেটররা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সব ধরনের প্রযুক্তি সেবার দিকে মনোনিবেশ করছে।
এ সময় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা (এমইএ) এবং লাতিন আমেরিকার পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো তুরস্ক, মিসর, নাইজেরিয়া ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। এসব অঞ্চলে ব্যবহারকারীপ্রতি গড় আয় (এআরপিইউ) বছরে ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ছে। তবে জার্মানি ও চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির কারণে এ সময় ইউরোপ ও এশিয়া প্যাসিফিকের পূর্বাভাস কমানো হয়েছে। এদিকে উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রে পূর্বাভাসে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, শুধু কানাডার বাজারে সামান্য বাড়ানো হয়েছে।
টেলিকম পরিষেবা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোবাইল পরিষেবাগুলো এখনো সবচেয়ে বড় খাত। কারণ মোবাইল ডাটা ও মেশিন টু মেশিন (এমটুএম) অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বেড়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময় বিশ্বব্যাপী মোবাইল কল ও টেক্সট মেসেজিংয়ের ব্যয় কমছে। আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, দ্রুতগতির ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়ার ফলে ফিক্সড ডাটা পরিষেবা (ব্রডব্যান্ড ও ফাইবার অপটিক কানেকশন) বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে ফিক্সড ভয়েস পরিষেবার (ঐতিহ্যগত ল্যান্ডলাইন ফোন) খরচ কমে যাবে।
এদিকে প্রথাগত পে-টিভি (কেবল টিভি বা স্যাটেলাইট টিভি সাবস্ক্রিপশন) বাজার পূর্বাভাসকালে কিছুটা হ্রাস পাবে। কারণ সময়ের সঙ্গে ভিডিও অন ডিমান্ড (ভিওডি) ও ওভার দ্য টপ (ওটিটি) পরিষেবাগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
আইডিসি আরো জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী কানেকটিভিটি পরিষেবার বাজার আগামী পাঁচ বছরে ২ শতাংশ বার্ষিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করছে সংস্থাটি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রেফারেন্স সুদের হার কমিয়ে রাখবে। মুদ্রাস্ফীতি ও অব্যাহতভাবে কমবে যা জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ পূর্বাভাসে উল্লিখিত নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিকম পরিষেবা বাজারের স্যাচুরেশন। যেসব দেশে বেশির ভাগ মানুষ এরই মধ্যে টেলিকম পরিষেবা, যেমন মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও টিভি ব্যবহার করছে, সেখানে নতুন গ্রাহক পাওয়ার সুযোগ কমবে। ফলে বাজারের প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যাবে। এছাড়া আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিরতা।
আইডিসি বলছে, ‘আমরা সর্বশেষ পূর্বাভাস নিয়ে আগের চেয়ে স্পষ্টভাবে বেশি আশাবাদী। তবে এ পরিস্থিতিতেও কানেকটিভিটি পরিষেবা বাজারের প্রবৃদ্ধি ধীর থাকতে পারে।’
সংস্থাটির এক গবেষণা পরিচালক ক্রেসিমির আলিক বলেন, ‘অপারেটররা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ভালো মুনাফা প্রত্যাশা করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার অপটিকস, আইওটি, ইউসিএএএস, এসডি-ওয়ান, ডিজিটাল পরিষেবা, এলইও স্যাটেলাইট পরিষেবা, ক্লাউড পরিষেবা, আইটি সিকিউরিটি পরিষেবা, নেটওয়ার্ক এপিআই ও নেটওয়ার্ক শেয়ারিং এবং ৫জি-অ্যাডভান্সড।’ এছাড়া এসব কোম্পানিকে তাদের কার্যক্রমে ডিজিটাল টুলস ও সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন