বার্নস অ্যান্ড নোবেলের নাটকীয় পুনরুত্থান – The Finance BD
 ঢাকা     বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন

বার্নস অ্যান্ড নোবেলের নাটকীয় পুনরুত্থান

  • ২৩/১১/২০২৪

ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউন এলাকার বড় এক বহুতল ভবন প্রাক্তন ‘বাসিন্দার’ প্রত্যাবর্তনের প্রহর গুনছে, যে ফিরে আসছে এক দশকেরও বেশি সময় পর। ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউন এলাকার বড় এক বহুতল ভবন প্রাক্তন ‘বাসিন্দার’ প্রত্যাবর্তনের প্রহর গুনছে, যে ফিরে আসছে এক দশকেরও বেশি সময় পর। এ বাসিন্দা হলো যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম খুচরা বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বার্নস অ্যান্ড নোবেল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি জর্জটাউনের আউটলেট ছেড়ে দিয়েছিল। এবার ফের পুরনো ঠিকানায় ফিরছে বার্নস অ্যান্ড নোবেল।
মার্কিন বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বার্নস অ্যান্ড নোবেলের যাত্রা ১৮৮৬ সালে। অবশ্য শুরুতে এর নাম ছিল আর্থার হিন্ডস অ্যান্ড কোম্পানি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ছয় শতাধিক আউটলেট রয়েছে এই চেইন বুকশপের। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভোক্তার রুচি পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে অনেক ব্যবসায়িক খাত ক্ষতির মুখে পড়ে। যার অন্তর্ভুক্ত ছিল বার্নস অ্যান্ড নোবেলের মতো বৃহৎ বইবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সিএনএনের এক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছর ৬০টিরও বেশি স্থানে আউটলেট খুলেছে এ প্রতিষ্ঠান, যার একটি জর্জটাউনে। নতুন এতগুলো শাখা খোলা প্রতিষ্ঠানটির একটি উচ্চাভিলাষী সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ, যার পেছনে রয়েছেন ২০১৮ সালে সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেয়া জেমস ডন্ট। তিনি দায়িত্বে আসার আগে এ ধরনের কোনো কিছুকে অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। জর্জটাউন শাখায় বার্নস অ্যান্ড নোবেলের প্রত্যাবর্তনকে ‘চিরায়ত বইয়ের দোকানের পুনরুত্থানের নাটকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন ডন্ট।
জেমস ডন্ট আসার আগে ব্যবসা সামলাতে হিমশিম খাওয়া বেশির ভাগ মার্কিন খুচরা বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পথ ধরেছিল বার্নস অ্যান্ড নোবেল। বিক্রি কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শত শত বুকশপ। ভোক্তারাও এরই মধ্যে রপ্ত করে ফেলেছেন অ্যামাজনের মতো অনলাইন প্লাটফর্মে কেনাকাটা।
এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক মডেলে পরিবর্তন আনে বার্নস অ্যান্ড নোবেল। প্রচারের ক্ষেত্রে গ্রাহকের পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করে তারা। সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে বই নিয়ে আলোচনা করে এমন এক শ্রেণীর পাঠকের সঙ্গে যুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
খুচরা বিক্রেতা নন, নিজেকে বই বিক্রেতা পরিচয় দিয়ে পূর্বসূরিদের থেকে নিজেকে আলাদা করেছেন জেমস ডন্ট। তার এ ভাবনা কোম্পানির বইকে অগ্রাধিকার দেয়ার দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ভাবনার অংশ হিসেবে কোন দোকানে কী ধরনের বই থাকবে তা সেখানকার চাহিদা অনুযায়ীই নির্ধারিত হবে।
জেমস ডন্ট বলেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন বার্নস অ্যান্ড নোবেলের সমস্যা ছিল যে বইয়ের দোকানগুলো খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না। আমার মতে, বইয়ের দোকান অবশ্যই ক্যাটাগরি অনুসারে সাজানো থাকতে হবে। আপনার বুঝতে হবে, কোন শিরোনামের বই পাঠককে আকৃষ্ট করবে এবং সে বইগুলো সামনে রাখতে হবে।’
জেমস ডন্টের বেশকিছু কৌশলই ছিল জুয়া খেলার মতো। তবে স্বাধীন বইয়ের দোকানের মডেলের সঙ্গে বার্নস অ্যান্ড নোবেলকে খাপ খাইয়ে নেয়ার পরিকল্পনা দারুণভাবে কাজে লেগেছে। ডাটা বিশ্লেষক সংস্থা ফুট ট্রাফিকের তথ্যানুসারে, ২০১৯ সাল থেকে বার্নস অ্যান্ড নোবেলে দর্শনার্থী বেড়েছে ৭ শতাংশ। জেমস ডন্ট বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতা হিসেবে আমরা এখন যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ। আগে যেকোনো মডেল তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু দেখার চেষ্টা করতাম। এখন প্রতিটি পৃথক দোকানেই আমরা মজার অনেক কিছু করি।’
বার্নস অ্যান্ড নোবেলের মডেলটি পৃথক পৃথক শাখার বিক্রেতাদের বিচারবোধের ওপর নির্ভর করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। অন্যদিকে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যামাজনের গল্পটা ভিন্ন। অ্যামাজন বই প্রদর্শনের ক্ষেত্রে রেটিংকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। অর্থাৎ, বেশি বিক্রীত বইগুলো সামনে দেখানো হতো। তবে এ পদ্ধতিতে পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পারেনি অ্যামাজন। ২০১৫ সালে অফলাইন বইয়ের বাজারে এসে ২০২২ সালেই চলে যেতে বাধ্য হয় অ্যামাজন।
বার্নস অ্যান্ড নোবেলের সাম্প্রতিক সাফল্যের পেছনে সামাজিক প্লাটফর্ম টিকটকের সাবকমিউনিটি বুকটককে কৃতিত্ব দেন জেমস ডন্ট। সেখানে নতুন নতুন বই সম্পর্কে আলোচনাও হয়। হ্যাশট্যাগ বুকটক দিয়ে চার কোটির বেশি পোস্ট রয়েছে। বার্নস অ্যান্ড নোবেলের বই বিষয়ক প্রধান শ্যানন ডেভিটো বলেন, ‘বুকটক যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে তা আবার পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগানোর পাশাপাশি দোকানে কোন কোন বই রাখতে হবে সে ধারণাও দেয়।’
সূত্র : সিএনএন

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us