যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিতে কয়েক মিলিয়ন অভিবাসন প্রত্যাশীর জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ইমিগ্রেশন কমিটির চেয়ার অ্যালেক্সা অ্যাভিলেস। সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে সতর্কবার্তা দিয়ে অ্যাভিলেস বলেছেন, সিটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী অভিবাসন প্রত্যাশী। তাই আমেরিকার নাগরিকত্ব নেই এমন যে কেউ ট্রাম্প প্রশাসনে বিতাড়ণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমনকি যারা গ্রিনকার্ড কিংবা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সের আবেদন করেছেন তারাও ঝুঁকির বাইরে নন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই গণহারে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন শুরু করবেন তিনি। এজন্য বর্ডার যার হিসেবে টম হোম্যানের মতো কঠিন সাবেক আইস কর্মকর্তাকে বেছে নিয়েছেন। ফলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন অধিকারকর্মী এবং আইনজীবীরা। অ্যাভিলেস জানিয়েছেন, সিটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী অভিবাসী, যাদের অনেকের কাগজ পত্র সম্পূর্ণ নয়। তাছাড়া স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি হলেও ফেডারেল বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বাধা দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ফেডারেল কর্মীদের সঙ্গে ট্রাম্পের আদেশ বাস্তবায়নেস্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অংশ নেবে না। এদিকে শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, অভিবাসীদের রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন তিনি। কোনো হুমকির কাছে মাথা নত করবেন না। ওদিকে বিতাড়নের শঙ্কায় দিন পার করছেন সারা দেশের অনিবন্ধিত অভিবাসীরা। নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া কিংবা অন্য কোনো স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি কোন জায়গাতেই নিরাপদ নন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। বলা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু গণহারে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নই করবেন না, এমনকি পরিবারের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিলেও পদেক্ষপ নেবেন। যাকে অমানবিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অধিকার কর্মী এবং ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নিরা। পশিচম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে থেকে আসা অভিবাসীরা নিউ ইয়র্কের হারলেম শহরকে লিটেল সেনেগাল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। নির্বাচনি প্রচারে এমন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প। তাই গত ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় রীতিমত আতঙ্ক তৈরী করেছে আফ্রিকান কমিউনিটির মাঝে। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ম্যাট গেইটজের নিয়োগ ট্রাম্পের গণবিতাড়ন পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা নিয়ে চরম ভীতিকর পরিস্থিতিতে রয়েছে লিটল সেনেগাল শহরের বাসিন্দারা।
পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে থেকে আমেরিকায় এসে নিউ ইয়র্কের হারলেম শহরটিতে নিজেদের খুঁজে পায় আফ্রিকানরা। এদের অধিকাংশই রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেনেগাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট মামাদু ড্রাম বলেছেন, তাদের অনেক লোক আমেরিকায় অবস্থান করছে। তারা সবাই উদ্বিগ্ন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন ও নির্বাসন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাচ্ছেন কমিউনিটির সদস্যরা। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী অ্যামাদু-বা এর মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনাগুলো কেবলমাত্র রাজনৈতিক। তার ভক্তদের একটি অংশ এধরনের মন্তব্যের কারণেই তাকে সমর্থন করে। ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যতটা বলেছেন আসলে তা তিনি করবেন না বলে ধারণা অ্যামাদু-বা’র। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবে আসলে কতটা কার্যকর হয় সেটা এখন দেখার অপেক্ষা। তবে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন আমেরিকায় বসবাসরত এসব অভিবাসীরা।
উল্লেখ্য, অভিবাসন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটা বড় ইস্যু ছিল। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমালা হ্যারিস দু’জনেই মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন। তবে অভিবাসী না থাকলে আমেরিকার জনসংখ্যা অনেক কম হবে। দেখা গেছে, ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি। সেই তথ্য বলছে, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী চার কোটি ৭৮ লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন যা মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
খবর: সিএনবিসি।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন