আবার নীতি সুদহার কমাল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। গত বৃহস্পতিবার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট নীতি সুদহার কমিয়েছে ফেড। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই ফেডের এই সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল। যদিও ফেড পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুদহার কমিয়েছে বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের শুরু থকেই জল্পনাকল্পনা ছিল, ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে। কিন্তু বছরের প্রথম প্রান্তিকে হঠাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ফেড সতর্ক অবস্থান নেয়। শেষমেশ তারা যখন মনে করল, মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ধারা স্থিতিশীল, তখনই তারা নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিল।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ফেড চলতি বছর প্রথমবার নীতি সুদহার কমায়। এরপর নভেম্বরে এসে তারা আবার সুদ কমাল। ফেডের এই সিদ্ধান্তে ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়েছে। ৬ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ভোটে জেতার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সুদহার কমানোর কথা ঘোষণা দেয় ফেডারেল রিজার্ভ। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। তিনি বলেন, ‘পরিসংখ্যান ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হবে। এরপর ডিসেম্বরের বৈঠকে সুদের হার আরও কমানো যায় কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোয় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের খরচ কমবে। তবে মসনদে বসে কর কমানো, শুল্ক বৃদ্ধি ও শরণার্থীদের নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ট্রাম্প। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়তে পারে। তখন ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক লাখ কোটি ডলার ঋণ নিতে পারে। এতে ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে সরকারের সংঘাত তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, ফেডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা থাকা উচিত।
সংবাদে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া ঋণের সুদহার বেড়েছে; এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের পক্ষে কর কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও নির্বাচনী প্রচারে সাধারণ মানুষের ওপর থেকে কর পুরোপুরি তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ কমানোয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। সে কারণে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সেপ্টেম্বর মাসে ফেডারেল রিজার্ভ এক ধাপে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট নীতি সুদ হ্রাস করে। যদিও সিংহভাগ মানুষের ধারণা ছিল, শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে নীতি সুদ কমানো হবে। এত দিন নীতি সুদহার ছিল ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ; গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল সর্বোচ্চ। এখন তা ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে নেমে এল।
২০২১ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে শুরু করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানির দাম অনেকটা বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতির সূচক তখন একদম ওপরের দিকে উঠে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ফেডারেল রিজার্ভ আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। পরিণামে মূল্যস্ফীতি কমেছে—৯ শতাংশের ঘর থেকে এখন তা ২ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। (খবরঃ এনবিসি ও রয়টার্স)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন