বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সি ১০ বিলিয়নিয়ার কারা, তাদের সম্পত্তির পরিমাণ কত? – The Finance BD
 ঢাকা     বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সি ১০ বিলিয়নিয়ার কারা, তাদের সম্পত্তির পরিমাণ কত?

  • ০১/০৭/২০২৪

বিলিয়নিয়ার হতে পারাটাই বিরল সৌভাগ্যের ব্যাপার, আর তরুণ বয়সে এ সৌভাগ্যের দেখা পাওয়া তো আরও বিরল ঘটনা। বিশ্বের বিলিয়নিয়ারদের গড় বয়স ৬৬, সবচেয়ে প্রবীণ বিলিয়নিয়ার ১০২ বছর বয়সি। তবে এর মধ্যেও অতিধনী অতি-তরুণ আছে বেশ কয়েকজন।
চলতি বছর ফোর্বসের ওয়ার্ল্ডস বিলিয়নিয়ার তালিকায় স্থান পাওয়া সবচেয়ে তরুণ ২৫ বিলিয়নিয়ারের সবার বয়স ৩৩ বা তার কম। এই ২৫ জনের মোট সম্পদের পরিমাণ ১১০ বিলিয়ন ডলার।
এদের মধ্যে স্ব-উপার্জিত অর্থে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন অল্প কজন। তাদের মধ্যে অন্যতম স্ন্যাপ-এর প্রতিষ্ঠাতা ইভান স্পিগেল (৩৩), জিমশার্ক-এর প্রতিষ্ঠাতা বেন ফ্রান্সিস (৩১) ও অকিউলাস ভিআর-এর প্রতিষ্ঠাতা পামার লাকি (৩১)।
২০০৯ সালের পর এই প্রথম ৩০ বছরের কম বয়সি প্রত্যেক বিলিয়নিয়ারই বাবা-মায়ের সম্পদ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে ধনকুবের হয়েছেন। এরচেয়ে কম বয়সি কেউই নিজের উপার্জিত টাকায় বিলিয়নিয়ারের তালিকায় ঢুকতে পারেননি। এ ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ধনকুবেরদের সম্পত্তি হস্তান্তরের বিশাল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সি বিলিয়নিয়ার ব্রাজিলের লিভিয়া ভয়েগট। কলেজশিক্ষার্থী লিভিয়ার বয়স মাত্র ১৯ বছর। জুলাইয়ে তিনি ২০-এ পা রাখবেন। দাদার প্রতিষ্ঠিত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কোম্পানির মালিকানার সুবাদে লিভিয়া ও তার বোন কনিষ্ঠ ধনকুবেরের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
সর্বকনিষ্ঠ ১০ বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় সবচেয়ে ধনী হচ্ছেন দুই ভাই ফিরোজ ও জাহান মিস্ত্রি। মুম্ভাইভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী টাটার মালিকানার সুবাদে তারা ৪.৯ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিক।
২০২৪ সালের কনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় স্থান পাওয়া ২৫ জনের প্রায় সবাই-ই গত বছরের চেয়ে ধনী হয়েছেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ১০ বিলিয়নিয়ারের নাম, তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ও সম্পত্তির উৎস। উল্টোক্রমে এ তালিকা দেওয়া হলো, অর্থাৎ ১০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ধনকুবেরের নাম এসেছে সবার প্রথমে, সর্বকনিষ্ঠ ধনকুবেরের নাম এসেছে সবার শেষে।
১০. ফিরোজ মিস্ত্রি
বয়স: ২৭ । নাগরিকত্ব: আয়ারল্যান্ড । সম্পদের উৎস: বিভিন্ন উৎস । নিট সম্পদ: ৪.৯ বিলিয়ন ডলার
ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী টাটা সান্স-এ ফিরোজ ও তার ভাই জাহানের ৪.৬ শতাংশ করে মালিকানা আছে। এ শিল্পগোষ্ঠীর আয় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। টাটা কনসাল্টেন্সি ও টাটা মোটরসসহ ২৯টি পাবলিক কোম্পানি আছে এ শিল্পগোষ্ঠীর অধীনে। ২০২২ সালে ৫৪ বছর বয়সে ফিরোজ ও জাহানের বাবা এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তারা।
৯. ডোরা ভয়েট ডি অ্যাসিস
বয়স: ২৬ । নাগরিকত্ব: ব্রাজিল । সম্পদের উৎস: শিল্পের যন্ত্রপাতি । নিট সম্পদ: ১.১ বিলিয়ন ডলার
ডোরা ও তার বোন লিভিয়া ডব্লিউইজির ৩.১ শতাংশ করে শেয়ারের মালিক। এ কোম্পানিতে তাদের কাজিন এদুয়ার্দো ও মারিয়ানার মালিকানা ৩.৯ শতাংশ। ডব্লিউইজি বিশ্বের ১৩৫টির বেশি দেশে যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে। ২৬ বছর বয়সি ডোরা ২০২০ সালে স্থাপত্যে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তবে ডব্লিউইজি পরিচালনে ডোরা ও লিভিয়ার কারোরই কোনো ভূমিকা নেই।
৮. জাহান মিস্ত্রি
বয়স: ২৫। নাগরিকত্ব: আয়ারল্যান্ড । সম্পদের উৎস: বিভিন্ন উৎস । নিট সম্পদ: ৪.৯ বিলিয়ন ডলার
টাটা শিল্পগোষ্ঠীর ৪.৬ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা তার সম্পদের অন্যতম উৎস। এছাড়া নির্মাণ জায়ান্ট শাপুরজি পাল্লোনজি গ্রুপের ২৫ শতাংশও শেয়ারের মালিকও তিনি। বাবার মৃত্যুর পর ভাই ফিরোজের সঙ্গে মিলে ঋণে জর্জরিত এসপি গ্রুপকে ঘুরে দাঁড়াতে কাজ করছেন তিনি। জাহান ও ফিরোজ দুজনেই আইরিশ নাগরিক হলেও তারা দুজনেই মুম্বাইয়ে থাকেন। এসপি গ্রুপ ও টাটাও মুম্বাইভিত্তিক প্রতিস্থান।
৭. রেমি ড্যাসো
বয়স: ২২ । নাগরিকত্ব: ফ্রান্স । সম্পদের উৎস: উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া । নিট সম্পদ: ২.৫ বিলিয়ন ডলার
২০২১ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে তার সম্পদ পান রেমি। ফরাসি সফটওয়্যার কোম্পানি ড্যাসো সিস্টেমিস-এর ২.৫ শতাংশ এবং ড্যাসো এভিয়েশনের ৪.১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানাই তার সম্পত্তির মূল উৎস। তার প্রপিতামহ ছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফরাসিদের ব্যবহার করা বিমানের প্রপেলারের আবিষ্কারক। তার হাত ধরেই এ পরিবারের সম্পদ অর্জন শুরু হয়।
৬. লুকা দেল ভেচিও
বয়স: ২২ । নাগরিকত্ব: ইতালি । সম্পদের উৎস: চশমা কোম্পানি । নিট সম্পদ: ৪.৭ বিলিয়ন ডলার
ক্লেমেন্তে দেল ভেচিওর সৎভাই লুকা। ডেলফিনের ১২.৫ শতাংশ মালিকানা তার সম্পত্তির মূল উৎস।
৫. কিম জাং-মিন
বয়স: ২২ । নাগরিকত্ব: দক্ষিণ । সম্পদের উৎস: অনলাইন গেমিং । নিট সম্পদ: ১.৪ বিলিয়ন ডলার
তিনি ও তার বোন জং-ইয়ুন প্রতেকে দক্ষিণ কোরিয়ান-জাপানি অনলাইন গেমিং কোম্পানি নিক্সন-এর ৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক। কোম্পানিটি তাদের বাবা প্রতিষ্ঠা করেন, ১৯৯৪। নিক্সনের হিট ভিডিও গেম ম্যাপলস্টোরি ২০০৩ সালে বাজারে আসে।
৪. কেভিন ডেভিড লেম্যান
বয়স: ২১ । নাগরিকত্ব: জার্মানি । সম্পদের উৎস: ওষুধের দোকান । নিট সম্পদ: ৩.৩ বিলিয়ন ডলার
মাত্র ১৪ বছর বয়সে কেভিনের বাবা তাকে জার্মানির শীর্ষস্থানীয় ওষুধের দোকান ডিএম-ড্রোগারি মার্কট-এর ৫০ শতাংশ মালিকানা দেন। এই ড্রাগস্টোর চেইনে ইউরোপজুড়ে ৪ হাজারের বেশি দোকান আছে। ২০২৩ অর্থবছরে এ চেইনের আয় ছিল ১৭ বিলিয়ন ডলার।
৩. কিম জাং-ইয়ুন
বয়স: ২০ । নাগরিকত্ব: দক্ষিণ কোরিয়া । সম্পদের উৎস: অনলাইন গেমিং । নিট সম্পদ: ১.৪ বিলিয়ন ডলার
অনলাইন ভিডিও গেম কোম্পানি ‘নিক্সন’-এর প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত কিম জং-জুর মেয়ে কিম জা-ইয়ুন। ২০২২ সালে বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পদের মালিক হয়েছেন কিম জাং-ইয়ুন। কিম জাং-ইয়ুন ও তার বোন জাং-মিন বাবার ব্যক্তিগত হোল্ডিং কোম্পানি ‘এনএক্সসি’র মোট শেয়ারের ৩৬.৭ শতাংশ পেয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর দুই বোন মোটা অঙ্কের উত্তরাধিকার কর পরিশোধ করেন।
২. ক্লেমেন্তে দেল ভেচিও
বয়স: ২০। নাগরিকত্ব: ইতালি। সম্পদের উৎস: চশমা কোম্পানি। নিট সম্পদ: ৪.৫ বিলিয়ন ডলার
ফোর্বসের আগের তালিকায় সর্বকনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় লিভিয়ার জায়গায় নাম ছিল ক্লেমেন্তে দেল ভেচিওর। ক্লেমেন্তের বাবা ইতালীয় ধনকুবের লিওনার্দো দেল ভেচিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় চশমা ফার্ম এসিলর লুক্সোটিকার সাবেক চেয়ারম্যান। লিভিয়ার চেয়ে বয়সে দুই মাসের বড় ক্লেমেন্তে।
ডেলফিন কোম্পানিতে ক্লেমেন্তের ১২.৫ শতাংশ শেয়ার আছে। তার আরও দুই ভাই আছেন।
১. লিভিয়া ভয়েট
বয়স: ১৯। নাগরিকত্ব: ব্রাজিল। সম্পদের উৎস: শিল্পের যন্ত্রপাতি। নিট সম্পদ: ১.১ বিলিয়ন ডলার
ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন ব্রাজিলের ১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থী লিভিয়া ভয়েট। আগামী ১০ জুলাই তিনি ২০-এ পা রাখবেন। লিভিয়া সম্পদের দিক থেকে এসিলোরলুক্সোটিকার উত্তরাধিকারী ক্ল্যামেন্ত দেল ভেচিওকে ছাড়িয়ে গেছেন।
লিভিয়া লাতিন আমেরিকার বৈদ্যুতিক মোটরের অন্যতম বৃহত্তম প্রস্তুতকারক ডাব্লিউইজির অন্যতম ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডারদের একজন। এটি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের ১০টি দেশে এর কারখানা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল রেকর্ড ৬ বিলিয়ন ডলার।
ডাব্লিউইজির শেয়ার লিভিয়ার আয়ের একটি বড় উৎস। প্রয়াত বিলিয়নিয়ার এগন জোয়াও দা সিলভা ও জেরাল্ডো ওয়ার্নিংহাউসের সঙ্গে লিভিয়ার দাদা ওয়ার্নার রিকার্ডো ভয়েট ডাব্লিউইজির সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। লিভিয়া বর্তমানে ব্রাজিলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। তিনি ডাব্লিউইজির বোর্ড বা এক্সিকিউটিভ পদে এখনও যোগ দেননি। লিডিয়ার বড় বোন ডোরা ভয়েটও ২০২৪ সালের সর্বকনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় আছেন।
সূত্র : ফোর্বস

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us