যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বার্ষিক ২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এপির খবর বলছে, দেশটিতে উচ্চ সুদহার কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ভোক্তা ব্যয় বাড়ায় এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ছিল ৩ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে এসে এ হার কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশে। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে প্রবৃদ্ধির এ হার দেশটির অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রমাণ দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির একটি বড় অংশ ভোক্তা ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে। তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির ভোক্তা ব্যয়ের হার বার্ষিক ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে বেড়েছে। আগের প্রান্তিকে এ বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তৃতীয় প্রান্তিকে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বেড়েছে দেশটির রফতানি। এ বৃদ্ধিও তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
তবে দেশটির আবাসন ও বাণিজ্যিক ভবন খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে এলেও সরঞ্জামের ব্যয় বাড়ায় তা ব্যবসায়িক খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি নিয়েও আশাব্যঞ্জক তথ্য রয়েছে। গত প্রান্তিকে বার্ষিক ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় সূচক (পিসিই)। সূচকটিকে ফেডারেল রিজার্ভের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্ফীতি সূচক মনে করা হয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে পিসিই মূল্যস্ফীতি সূচক ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে এসে এ হার আগের তুলনায় নেমেছে। এমনকি এটি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তৃতীয় প্রান্তিকে খাদ্য ও জ্বালানি বাদে মূল পিসিই মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ২ শতাংশ। এপির খবর বলছে, এ হারও আগের প্রান্তিকের চেয়ে কম।
কভিড-১৯ মহামারীর পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে আসতে শুরু করেছিল মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। পরে ২০২২ ও ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সুদহার বাড়িয়েছিল দেশটি। তবে এ উদ্যোগকে তখন অনেকেই স্বাগত জানাতে পারেননি। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই মনে করেছিলেন, সুদহার বৃদ্ধি অর্থনীতিতে মন্দা ডেকে নিয়ে আসতে পারে। তবে তাদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে মন্দার আশঙ্কাকে পাশ কাটাতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। এখন মূল্যস্ফীতি কমতে থাকায় সুদহার কাটছাঁট করতে শুরু করেছে ফেডারেল রিজার্ভ।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ রায়ান সুইট বলছেন, ‘তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব দেখে মনে হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি ভালো অবস্থানেই রয়েছে। তাছাড়া মূল্যস্ফীতি হ্রাস দেশটির ফেডারেল রিজার্ভের জন্যও সুসংবাদ।’
বুধবারের প্রতিবেদনের অর্থনীতির মূল শক্তি নির্দেশ করে, এমন কিছু তথ্যও আছে। ওই সূচকেও আগের প্রান্তিকের চেয়ে উন্নতি করেছে দেশটির অর্থনীতি। সূচকটি তৃতীয় প্রান্তিকে ৩ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের ফলাফলও দেশটির স্বাস্থ্যকর অর্থনীতির ইঙ্গিত দেয়। অর্থনীতির প্রতি ভোক্তাদের আস্থার মাত্রা নির্দেশক সূচকগুলোও ঊর্ধ্বমুখী। এসব সূচকও এক বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক মন্দার কোনো আশঙ্কা নেই বলেই ইঙ্গিত দেয়। অবশ্য সম্প্রতি দেশটির চাকরির বাজারে কিছুট শ্লথগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। চলতি বছর প্রতি মাসে দেশটিতে গড়ে দুই লাখ কর্মীর চাহিদা তৈরি হয়েছে। মহামারীর পর যে হারে চাকরি তৈরি হচ্ছিল, সে তুলনায় সাম্প্রতিক এ হার বেশ কম। ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবরে এ হার আরো কমতে পারে।
তবে দেশটির মূল্যস্ফীতি অব্যাহতভাবে কমতে থাকলেও গড় দ্রব্যমূল্য এখনো মহামারীর আগের তুলনায় বেশি। ফেডারেল রিজার্ভ তাদের সর্বশেষ সভায় মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বেশকিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছে। এরই মধ্যে তারা কিছু ক্ষেত্রে সুদহার কাটছাঁট করেছে। আগামী সপ্তাহে সুদহার আরো কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন