দীর্ঘসময় ধরে কোকা-কোলা ও পেপসিকো ভারতীয় পানীয়ের ব্যবসায় একচেটিয়া দখল করে আসছে। সবমিলিয়ে এখানে দেশটিতে প্রতিবছর ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা রয়েছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মুকেশ আম্বানি বহুমুখী ব্যবসার সাথে যুক্ত। এবার তিনি নামছেন কোমল পানীয়ের বাজারের। সেক্ষেত্রে ভারতে নতুন করে ক্যাম্পা কোলা নিয়ে আসছেন তিনি। যেটি ইতিমধ্যে বাজার দখল করে থাকা কোকা-কোলা কিংবা পেপসির প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।
ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্যাম্পা কোলা দামে সাশ্রয়ী হবে এবং বেশ বড় পরিসরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে রিলায়েন্স নিজেদের বড় পুঁজি ও ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে। পণ্যের মূল্য নির্ধারণে ভিন্নতা দেখিয়ে রিলায়েন্স বরাবরই চমক দেখিয়ে আসে। এক্ষেত্রে টাটার মতো বৃহৎ কোম্পানিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ও নিজেদের ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তন করেছে। মাত্র ১০ রুপিতে ক্যাম্পা কোলা কিনতে পাওয়া যাবে বলে শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশটিতে অন্যান্য কোম্পানিগুলো তাদের মূল্য পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে।
ক্যাম্পা কোলার ইতিহাস
১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে ক্যাম্পা কোলা ছিল ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড। ঘরে ঘরে এই পানীয় পাওয়া যেত। তবে ১৯৯০ এর দশকে বাজারে কোকা-কোলা ও পেপসির মতো কোম্পানি মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে প্রবেশে সেটি বাজার হারাতে থাকে। তৎকালীন পিউর ড্রিংকস গ্রুপ উৎপাদন করতো ক্যাম্পা কোলা। আর এর মালিকানায় ছিলেন ব্যবসায়ী মোহান সিং। ভারতের কোমল পানীয়ের জগতে পিউর ড্রিংকস ছিল জায়ান্ট কোম্পানি। তারাই ১৯৪৯ সালে দেশটিতে কোকা-কোলা নিয়ে আসে। ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত তারাই এর উৎপাদন ও বিপণনের দায়িত্বে ছিল। প্রায় ১৫ বছর পিউর ড্রিংকস গ্রুপ ও ক্যাম্পা বেভারেজ ভারতের কোমল পানীয়ের জগত পুরোটা দখলে রেখেছিল। বৈদেশিক কোম্পানির অনুপস্থিতির সুযোগে পিউর ড্রিংকস গ্রুপ ক্যাম্পা কোলা বাজারে আনে। ব্র্যান্ডটির স্লোগান ছিল ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান টেস্ট’। এই ব্র্যান্ডিংয়ে খুব পরিস্কারভাবে জাতীয়তাবাদের বিষয়টি ফুটে ওঠে। ১৯৮০ এর দশকে ক্যাম্পা অরেঞ্জ ও রুশই ছিল ভারতে অরেঞ্জ সফট ড্রিংকস। এক্ষেত্রে এর বোতল তৈরির ইন্ডাস্ট্রি ছিল মুম্বাই ও দিল্লীতে। ১৯৯০ এর দশকে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাধাহীন ব্যবসার সুযোগ পেলে ক্যাম্পা কোলার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। ২০০০-২০০১ সালে এটির বোতল তৈরিকারক প্ল্যান্ট ও অফিস বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এটির অল্প সংখ্যক পণ্য হারিয়ানা রাজ্যে তৈরি হতো। কিন্তু ততদিনে সেটি জনপ্রিয় পানীয়ের তালিকা থেকে এটি হারিয়ে গেছে।
ক্যাম্পা কোলার মালিকানার রিলায়েন্স
২০২২ সালে ২২ কোটি রুপি দিয়ে ক্যাম্পা কোলা কিনে নেয় রিলায়েন্স। এরপর থেকে কিছু রিটেইল ভেঞ্চারে তারা পানীয়টির কোলা, অরেঞ্জ ও লেমন ফ্লেভার রাখা শুরু করে। ২০২৩ সালের ৯ মার্চ রিলায়েন্স সোসরো হাজুরি বেভারেজেস প্রাইভেট লিমিটেডের ৫০ ভাগ শেয়ার কিনে নেন। বেভারেজ ব্যবসায় কোম্পানিটির প্রভাব রয়েছে।
কোকা-কোলা ও পেপসিকোর জন্য হুমকি?
দীর্ঘসময় ধরে কোকা-কোলা ও পেপসিকো ভারতীয় পানীয়ের ব্যবসায় একচেটিয়া দখল করে আসছে। সবমিলিয়ে এখানে দেশটিতে প্রতিবছর ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা রয়েছে। ইউরোমনিটরের অনুমান মতে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত ভারতের পানীয়ের বাজার বছরে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে রিলায়েন্সের বড় বড় কোম্পানি নিজেদের আর্থিক ও বিপণনের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারে। (সূত্রঃ দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন