আবাসন খরচ মেটাতে পাতে খাবার তোলা কমিয়েছে ইউরোপীয়রা – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

আবাসন খরচ মেটাতে পাতে খাবার তোলা কমিয়েছে ইউরোপীয়রা

  • ২৭/১০/২০২৪

অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে ইউরোপের মানুষ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁটে বাধ্য হচ্ছে। নতুন এক জরিপ অনুসারে, অঞ্চলটির বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ ক্রমবর্ধমান আবাসন ব্যয় মেটাতে পাতে কম খাবার তোলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছে না। আবাসন খাতের এজেন্সি আরই/এমএএক্স ইউরোপ সংকলিত ‘দ্য নিউ হাউজিং ট্রেন্ড রিপোর্ট ২০২৪’ উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে ইউরো নিউজ। অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে ইউরোপের মানুষ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁটে বাধ্য হচ্ছে। নতুন এক জরিপ অনুসারে, অঞ্চলটির বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ ক্রমবর্ধমান আবাসন ব্যয় মেটাতে পাতে কম খাবার তোলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছে না। আবাসন খাতের এজেন্সি আরই/এমএএক্স ইউরোপ সংকলিত ‘দ্য নিউ হাউজিং ট্রেন্ড রিপোর্ট ২০২৪’ উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে ইউরো নিউজ।
জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের বেশি ইউরোপীয় আবাসন খরচ মেটাতে এতটাই হিমশিম খাচ্ছে যে খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনে হাত খুলতে পারছে না তারা। এ জরিপে কয়েক হাজার ইউরোপীয় অংশ নেয়। তাতে দেখা গেছে, সর্বশেষ ১২ মাসে ইউরোপে আবাসন খরচ গড়ে ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপীয়দের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বা ৩৭ শতাংশ জানিয়েছে, আবাসন ব্যয় জোগাড় করতে পারলেও আর্থিকভাবে বেশ কঠিন সময় পার করছে। প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বা ১৯ শতাংশ বলেছে, তারা খরচ মেটাতে রীতিমতো যুদ্ধ করছে।
ইউরোপীয় পরিবারগুলো গড়ে তাদের আয়ের ৩৮ শতাংশ ভাড়া বা বন্ধকি পরিশোধ এবং পরিষেবা বিল দিতে ব্যয় করে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ খরচ করে স্লোভেনিয়া এবং ৪২ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে পর্তুগাল। আবাসন খরচ সবচেয়ে কম সুইজারল্যান্ডে। এখানকার বাসিন্দারা খরচ করে আয়ের ৩০ শতাংশ।
জরিপে ৮০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান আবাসন খরচ মেটাতে তারা খরচ কমাতে শুরু করেছে। প্রায় ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকে ইস্তফা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছুটির দিনে বিনোদন ও শৌখিন কেনাকাটা বাদ দিয়েছে ৪০ শতাংশ। এছাড়া ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা খাবারের খরচ কমিয়েছে। এক্ষেত্রে অস্ট্রিয়া ও ফিনল্যান্ড ২৬ শতাংশ নিয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।
শুধু খরচ কমানোই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হচ্ছে না, ১৫ শতাংশ ইউরোপীয় জানিয়েছে, আবাসন ব্যয় মেটানোর জন্য তারা দেনা করতে বাধ্য হয়েছে। এ প্রবণতা তুরস্কে ৩২ শতাংশ, বুলগেরিয়ায় ২২ ও রোমানিয়ায় ২০ শতাংশ।
ঋণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আবাসন ব্যয়ের খরচ জোগাচ্ছে। এর চেয়ে সামান্য কম ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে, পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়েছে। এক-চতুর্থাংশ ব্যাংকে জমা অর্থ তুলে নিয়েছে এবং ২৩ শতাংশ বলেছে, কোনো ধরনের বন্ধকি ছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। কেননা উত্তরদাতাদের প্রায় অর্ধেক বা ৪৮ শতাংশ ধারণা, আগামী ১২ মাসে আবাসন ব্যয় আরো বাড়তে পারে।
আবাসন খরচ নাভিশ্বাস হয়ে ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ইউরোপীয়দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বর্তমান জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে। ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা জানায়, আরো সাশ্রয়ী জীবনের জন্য বর্তমান বাসস্থান ছেড়ে তারা কোনো ছোট শহর চলে যাবে। এমনকি ২৪ শতাংশ বিদেশে পাড়ি দিতে প্রস্তুত। তবে ২১ শতাংশ এখনই নিজ এলাকা ছাড়তে রাজি নয়।
আবাসন খরচের মধ্যে বাড়ি ভাড়া, বন্ধকি ঋণের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিষেবার খরচও যুক্ত রয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ১৮ শতাংশ বলেছে, জ্বালানি বিল পরিশোধে তারা হিমশিম খাচ্ছে। এ ধরনের সংকট তুলনামূলক গ্রিসে বেশি। এখানে ৩৬ শতাংশ বাসিন্দা জ্বালানি ব্যয় মেটাতে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক পরিবার দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশবান্ধব বাড়ি বা ব্যবস্থাপনার কথা ভাবতে পারছে না। কারণ তাদের অগ্রাধিকারজুড়ে রয়েছে চলতি মাসের বিল কীভাবে পরিশোধ করবে সে বিষয়টি।
জরিপে উত্তরদাতাদের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বা ২৭ শতাংশ সোলার প্যানেল ইনস্টল করার কথা ভাবছে এবং ২৫ শতাংশের চিন্তায় রয়েছে বিশেষায়িত ডাবল গ্লেজিং জানালা। এছাড়া বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও তাপীয় পাম্প তেমন অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। এক-পঞ্চমাংশ উত্তরদাতা এসব বিষয়ে ভাবছে। তবে প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা জানিয়েছে, সরকারি সহায়তা বা ভর্তুকি পেলে সাশ্রয়ী এসব ব্যবস্থা বাড়িতে যোগ করবে।
আবাসন খরচ সম্পর্কে এমন উদ্বেগ সত্ত্বেও ইউরোপের অনেক অংশে সন্তুষ্টিও দেখা যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডস ও রোমানিয়ার আবাসন পরিস্থিতি নিয়ে ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এ দেশগুলোয় বাড়ির মালিকানার হার অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক বেশি এবং আবাসনের মান ভালো। গড়ে ৭৬ শতাংশ ইউরোপীয় বাসস্থান নিয়ে খুশি। এর বিপরীতে নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে মাল্টা, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভেনিয়া, হাঙ্গেরি, তুরস্ক, গ্রিস ও আয়ারল্যান্ডে।
ইউরোপের দেশগুলো বসবাসের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্টির মাত্রায় ভেদ রয়েছে। পোল্যান্ডে ৫৮ শতাংশ বাসিন্দা স্থানসংকুলান নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেখানে ইউরোপীয়দের ৩৭ শতাংশ এ বিষয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। সম্পত্তি ব্যয়বহুল হওয়ায় অসন্তুষ্টি জানিয়েছে জরিপে অংশ নেয়া ৩৩ শতাংশ মানুষ; যা মাল্টায় ৫৩, আয়ারল্যান্ডে ও ফিনল্যান্ডে ৪৮ শতাংশ। এছাড়া পর্তুগালের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ নিয়ে হতাশ। অন্যদিকে এক-পঞ্চমাংশ জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি ও কীটপতঙ্গবাহী নানা রোগ এখন নেদারল্যান্ডসের প্রধান সমস্যা।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us