বিশ্ব বাণিজ্যের শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) শহর দুবাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে দেশটির আরেক শহর আবুধাবি। এরই মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে পরিসম্পদ ব্যবস্থাপক ও বিলিয়নেয়ারদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে শহরটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, আবুধাবির এ অগ্রগতি ইউএইকে নিউইয়র্ক, লন্ডন বা হংকংয়ের মতো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করছে।
জ্বালানি তেলের সমৃদ্ধ রিজার্ভের অভাব থাকা সত্ত্বেও গত দুই দশকে দুবাই বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। তুলনামূলক কম কর, অনুকূল ব্যবসায়িক আইন, আরব অঞ্চলের গতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের কাছে শহরটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারস সূচকে দুবাইয়ের অবস্থান ১৬তম। একই সূচকে আবুধাবি রয়েছে ৩৫তম স্থানে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অঞ্চলে শহর দুটি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
ইউএইর জ্বালানি তেল মজুদের ৯০ শতাংশই রয়েছে আবুধাবিতে। জ্বালানি তেল খাতের বাইরে শহরটির অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সমৃদ্ধ অর্থনীতি ও প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের মাধ্যমে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ফলে সৃষ্ট নতুন খাতের কোম্পানিগুলোর উত্থান ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়েছে।
চলতি সপ্তাহে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে হয়েছে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (এআইএম) সম্মেলন। এ সম্মেলন সামনে রেখে আবুধাবিভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নেভিশন ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রায়ান লেম্যান্ড বলেন,”‘গত এক বছরে আবুধাবিতে অর্থ ব্যবস্থাপক, হেজ ফান্ড ও বিকল্প বিনিয়োগকারীদের আগমন বেড়েছে। এসব কোম্পানিই সম্মেলনে তহবিল সংগ্রহে এসেছে।’
সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ব্রেভান হাওয়ার্ড ও জেপি মরগান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানও ছিল। কিছু কোম্পানি এরই মধ্যে দুবাই বা আবুধাবিতে তাদের কার্যালয় স্থাপন করেছে।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, বাণিজ্য গন্তব্য হওয়ার দৌড়ে আবুধাবির চেয়ে দুবাই এখনো অনেকটা এগিয়ে আছে। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারে (ডিআইএফসি) বর্তমানে ৪২০টির বেশি সম্পদ ও পরিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত আছে। অন্যদিকে আবুধাবিতে চলতি বছরের জুনের শেষ পর্যন্ত নিবন্ধিত তহবিল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১১২। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, আবুধাবির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
কোম্পানি নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল আকর্ষণ ও সহজে ব্যবসায়িক লাইসেন্স পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীদের কাছে আবুধাবি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন কোনো ব্যবসা শুরুর জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের শীর্ষ হেজ ফান্ড ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েটসসহ অনেক প্রতিষ্ঠান আবুধাবিতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মার্কিন বীমা প্রতিষ্ঠান প্রুডেনশিয়াল ফাইন্যান্সের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা শাখা পিজিআইএম এবং নুভিনও শহরটিতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। নিউইয়র্কভিত্তিক প্রাইভেট ইকুইটি প্রতিষ্ঠান জেনারেল আটলান্টিকও প্রাথমিক অনুমোদন পেলে আবুধাবিতে ব্যবসা শুরু করবে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পরিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। আবুধাবি গ্লোবাল মার্কেটের তথ্যানুযায়ী, আরো এক ডজনেরও বেশি সম্পদ ব্যবস্থাপক ও হেজ ফান্ডকে প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবুধাবি বিশ্বে সবচেয়ে ধনী শহর হিসেবে পরিচিত। এর সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, সার্বভৌম তহবিলের বড় উপস্থিতি আবুধাবিতে ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করছে। প্রসঙ্গত, দুবাইয়ে এ ধরনের তহবিলের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলার।
উভয় শহরের অনুকূল আইন ও স্বচ্ছতা আর্থিক বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধান আকর্ষণ। জেপি মরগান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রাইভেট মার্কেটের ডেপুটি হেড ব্র্যান্ডন রবিনসন বলেন, ‘শহর দুটির আইনি কাঠামো বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।’
ইউএই ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রির বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। ২০২২ সাল থেকে দুবাইয়ে এ খাতের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে সংস্থাটি বৈশ্বিক ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্টির জন্য জাতীয় কাঠামোর অভাব রয়েছে। অনদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এ খাতে বিনিয়োগের নিয়ম কঠোর করছে। ফলে ইউএই এক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। ব্রেভান হাওয়ার্ডের গ্রুপ কমপ্লায়েন্সের প্রধান রায়ান টেইলর এআইএম সম্মেলনে জানান, তারা ইউএইতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্রিপ্টো ব্যবসা করছে। (খবরঃ রয়টার্স)।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন