পুনর্ব্যবহৃত ই-বর্জ্যের চমকপ্রদ ব্যবসা – The Finance BD
 ঢাকা     শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন

পুনর্ব্যবহৃত ই-বর্জ্যের চমকপ্রদ ব্যবসা

  • ২৬/১০/২০২৪

ই-বর্জ্য বলতে যে কোনো প্লাগ বা ব্যাটারি যুক্ত পরিত্যক্ত যন্ত্রকে বোঝানো হয়, যেমন কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, গেম কন্ট্রোলার ইত্যাদি। নাইজেরিয়ার লাগোসের তিজ্জানি আবুবকর বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে ধনী দেশগুলোতে বিক্রি করেন। তার কর্মশালা একটি মলিন কংক্রিট ভবনের মধ্যে অবস্থিত, যেটি একটি বিশাল ইলেকট্রনিক্স বাজারের কাছাকাছি। এখানকার কর্মীরা দক্ষ হাতে স্ক্রু ড্রাইভার ও হাতুড়ি দিয়ে নষ্ট মোবাইল ফোন খুলে সেগুলোর ভেতরকার সবুজ সার্কিট বোর্ডগুলো বের করে জমা করে। এভাবে সংগ্রহ করা এই ইলেকট্রনিক বর্জ্যগুলো পরবর্তীতে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং সেগুলো বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন আবুবকর।
আবুবকরের প্রতিষ্ঠান মূল্যবান ধাতু যেমন তামা, নিকেল এবং সোনার মতো উপাদানসমৃদ্ধ সার্কিট বোর্ডগুলো সংগ্রহ করে। তবে এই ধাতুগুলো সংগ্রহ করা শুধু ফোন ভাঙার মতো সহজ কাজ নয়। সার্কিট বোর্ডগুলো প্রথমে গুঁড়িয়ে তারপর সেগুলো থেকে ধাতু আলাদা করতে হয়, যা অত্যাধুনিক ও খরুচে যন্ত্রপাতি ছাড়া সম্ভব নয়। আফ্রিকার কোনো স্থানে এই কাজ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। তাই আবুবকর তার সার্কিট বোর্ডগুলো ইউরোপ বা চীনের মতো উন্নত দেশগুলোর রিসাইকেল [পুনর্ব্যবহার] প্রতিষ্ঠানে পাঠান। দরিদ্র দেশগুলোতে ধনী দেশগুলোর ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ফেলার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই আলোচিত। তবে এখন নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে বিপরীত দিক থেকে ই-বর্জ্যের গমন। গ্লোবাল সাউথের উদ্যোক্তারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন। ই-বর্জ্য বলতে যে কোনো প্লাগ বা ব্যাটারি যুক্ত পরিত্যক্ত যন্ত্রকে বোঝানো হয়, যেমন কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, গেম কন্ট্রোলার ইত্যাদি। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৬৮ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা পৃথিবী ঘিরে থাকা ট্রাকের সারি দিয়ে পূর্ণ করা সম্ভব।
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই কঠিন কারণ এগুলো যদি মাটিতে ফেলা হয়, তবে বিষাক্ত রাসায়নিক মাটিতে এবং পানিতে মিশে যেতে পারে। ব্যাটারিগুলো আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, যার ফলে ডাম্পিং সাইটে আগুন লেগে যেতে পারে। এর পরও জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মাত্র ২২ শতাংশ ই-বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইকেল করা হয়। বাকি বর্জ্যগুলো পরিত্যক্ত, পুড়িয়ে ফেলা হয় অথবা বাসা কিংবা কর্মস্থলে অযত্নে পড়ে থাকে, যা ক্রমশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ই-বর্জ্য শুধু পরিবেশের ক্ষতি করে না, এটি মূল্যবান সম্পদের অপচয়ও করে। ফোন এবং ল্যাপটপের মতো ডিজিটাল যন্ত্রগুলোতে থাকে দামি ধাতু, যেমন সার্কিট বোর্ড ও ক্যাবলে তামা এবং ব্যাটারিতে লিথিয়াম, কোবাল্ট ও নিকেল। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৬০ বিলিয়ন ডলারেরও ধাতু ই-বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। ধনী দেশগুলোতে পুরোনো ফোন বা গ্যাজেট রিসাইকেল করার সহজ উপায় নেই। তাই সেগুলো ফেলে দেওয়া হয় বা অব্যবহৃত থাকে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে প্রতি ৬টি মোবাইল ফোনের মধ্যে মাত্র ১টি রিসাইকেল করা হয়। (সূত্রঃ দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড)

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us