জেনারেটিভ এআই (সৃজনশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে অর্থ লগ্নিকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আছে। জেনারেটিভ এআই (সৃজনশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে অর্থ লগ্নিকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আছে। তা সত্ত্বেও অনেক বিনিয়োগকারী এ খাতের ওপর আস্থা রাখছেন। ফান্ডিং ট্র্যাকার পিচবুকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পিচবুকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যৌথ মূলধনি (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বা ভিসি) প্রতিষ্ঠানগুলো ২০৬টি চুক্তির মাধ্যমে জেনারেটিভ এআই স্টার্টআপে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৩৯০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ১২৭টি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিগুলোর পেছনে ২৯০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। তবে এ হিসাবের মধ্য ওপেন এআইয়ের ৬৬০ কোটি ডলারের অর্থায়ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বড় এআই স্টার্টআপের মধ্যে কোডিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যাজিক আগস্টে ৩২ কোটি ডলারের বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে। এছাড়া এন্টারপ্রাইজ সার্চ স্টার্টআপ গ্লিন সেপ্টেম্বরে ২৬ কোটি ডলার, বিজনেস অ্যানালিটিকস ফার্ম হেব্বিয়া জুলাইয়ে ১৩ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে। চীনের মুনশট এআই আগস্টে ৩০ কোটি ডলার ও জাপানের স্টার্টআপ সাকানা এআই গত মাসে ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অর্থায়ন পেয়েছে।
জেনারেটিভ এআই টেক্সট ও ইমেজ জেনারেটর, কোডিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, সাইবার সিকিউরিটি অটোমেশন টুলসসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত। বর্তমানে নানা কাজে অত্যন্ত কার্যকরভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। তবে এর কিছু সমালোচনাও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তিটির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমনকি কপিরাইট করা ডাটা থেকে প্রশিক্ষিত এআই মডেলের বৈধতা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
যৌথ মূলধনি কোম্পানিগুলোর প্রত্যাশা, বড় ও লাভজনক শিল্পগুলোয় জেনারেটিভ এআইয়ের প্রভাব আগামী দিনগুলোয় বাড়বে। বর্তমান প্রাযুক্তিক চ্যালেঞ্জগুলো দীর্ঘমেয়াদে এর প্রবৃদ্ধিকেতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। ফলে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে কোম্পানিগুলো।
অনেক গবেষণায়ও এ ধরনের আশাবাদ দেখা গেছে। প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফোরেস্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেটিভ এআই নিয়ে সংশয়ে থাকা ৬০ শতাংশ মানুষ নিজেদের অজান্তেই বিভিন্ন কাজে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করবে। তবে এর আগে আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ জেনারেটিভ এআই প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়েই বাতিল হয়ে যাবে।
পিচবুকের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ব্রেন্ডন বার্ক বলেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্টআপের টুলিং ও ওপেন সোর্স মডেলের সুবিধা নিয়ে নিজেদের প্রডাকশন সিস্টেম তৈরি করছে। বৈজ্ঞানিক ব্যবহার, ডাটা পুনরুদ্ধার ও কোড এক্সিকিউশনের ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের মডেলগুলো সফল হতে পারে।
জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের অনেক বাধা এখনো রয়ে গেছে। বেইনের বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসমতে, কোম্পানিগুলোকে গিগাওয়াট সক্ষমতার ডাটা সেন্টার তৈরি করতে বাধ্য করবে জেনারেটিভ এআই। এ ধরনের ডাটা সেন্টার বর্তমান ডাটা সেন্টারগুলোর তুলনায় ৫-২০ গুণ বেশি বিদ্যুৎ খরচ করবে। এতে কায়িক শ্রম ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা আরো চাপে পড়বে।
এরই মধ্যে জেনারেটিভ এআইচালিত ডাটা সেন্টারগুলোয় বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদার কারণে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জীবৎকাল দীর্ঘায়িত হয়েছে। মরগান স্ট্যানলির পূর্বাভাস, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ তিন গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। জেনারেটিভ এআইয়ের বিস্তার না হলে তা হতো না।
বিশ্বের বৃহত্তম ডাটা সেন্টার অপারেটরগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, গুগল ও ওরাকল অনবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কমাতে পারমাণবিক বিদ্যুতে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। তবে এসব বিনিয়োগের ফল পেতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
জেনারেটিভ এআই স্টার্টআপগুলোর বিনিয়োগে কোনো ধীরগতি দেখা যাচ্ছে না। ভয়েস ক্লোনিং টুলের নির্মাতা ইলেভেনল্যাবস ৩০০ কোটি ডলারের অর্থায়ন সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। এক্সের ইমেজ জেনারেটরের নির্মাতা ব্ল্যাক ফরেস্ট ল্যাবস ১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। (খবরঃ টেকক্রাঞ্চ)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন