বাসমতী ব্যতীত অন্যান্য সাদা চালের ন্যূনতম রফতানি মূল্য (এমইপি) এবং আধা সেদ্ধ চালের রফতানি শুল্ক তুলে নিতে যাচ্ছে ভারত সরকার। বাসমতী ব্যতীত অন্যান্য সাদা চালের ন্যূনতম রফতানি মূল্য (এমইপি) এবং আধা সেদ্ধ চালের রফতানি শুল্ক তুলে নিতে যাচ্ছে ভারত সরকার। সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় প্যানেলের এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি আকারে এসব সিদ্ধান্ত প্রচার করা হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২৩ সালের আগস্টে আধা সেদ্ধ চাল রফতানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিল ভারত সরকার। এছাড়া ওই বছরের জুলাই থেকে সাদা চালের রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর সরকার আধা সেদ্ধ চালের রফতানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে। এছাড়া বাসমতী ছাড়া অন্যান্য সাদা চাল রফতানির ক্ষেত্রে প্রতি টনে ৪৯০ ডলারের এমইপি বেঁধে দেয়া হয়। এবার এসব সীমাবদ্ধতাও তুলে নেয়া হচ্ছে। ফলে চাল রফতানি আরো সহজ হয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে গত বছরের চালের মজুদ উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খরিপ মৌসুমে স্থানীয় বাজার থেকে চাল কিনতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া চলতি মাসের প্রথমার্ধে ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য সংস্থা মজুদাগারের অভাবে চাল ক্রয় অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। এসব কারণে রফতানি বাধা কমিয়ে আনছে সরকার।
গত সপ্তাহের শুরুতে ভারতীয় চাল রফতানিকারক ফেডারেশন (আইআরইএফ) বাণিজ্যমন্ত্রী পিয়ুষ গয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এমইপি ও রফতানি শুল্ক তুলে নেয়ার দাবি জানায়। এ সময় বিশ্ববাজারে বিশেষ করে পাকিস্তানের মতো দেশের প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে ভারতে চালের অতিরিক্ত মজুদ তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করে তারা।
থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সাদা চাল বর্তমানে টনপ্রতি ৪৮৮-৪৯২ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। একই ধরনের চাল পাকিস্তান ৪৮১-৪৮৫ ডলারে বিক্রি করছে। এছাড়া ২৫ শতাংশ খুদযুক্ত সাদা চাল ভারত প্রতি টন ৪৯১-৪৯৫ ডলারে মূল্যে বিক্রি করলেও পাকিস্তান তা ৪৪০-৪৪৪ ডলারে বিক্রি করছে।
অন্য প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড উভয় ধরনের চালের দাম প্রতি টন ৫০০ ডলারের ওপরে রেখেছে। ১০ শতাংশ রফতানি শুল্ক থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় আধা সেদ্ধ চাল ৪৯০-৪৯৪ ডলারে বিক্রি করছে। যেখানে পাকিস্তান বিক্রি করছে ৫০০-৫০৪ ডলারে।
দিল্লিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেন, ‘এমইপি ও ১০ শতাংশ রফতানি শুল্ক তুলে দেয়ার জন্য মজুদ সমস্যাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা উচিত হয়নি। কারণ সরকার শিগগিরই পাঞ্জাব থেকে ৪০ লাখ টন চাল কিনবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার অতিরিক্ত শস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম। রফতানি সীমাবদ্ধতা দূর করতে মজুদ সমস্যার অজুহাত দেয়ার প্রয়োজন নেই।’ প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে বিরূপ আবহাওয়ায় গম ও চাল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ কারণে ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল দেশটির সরকার। ওই বছর অকাল বৃষ্টিতে গমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
একই সময়ে পূর্বাঞ্চলে কম বৃষ্টিপাতে চাল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাবিত হয়েছিল। এসব সত্ত্বেও চাল উৎপাদন রেকর্ড ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার টনে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। নয়াদিল্লির রফতানিকারক রাজেশ জয়ন পাহারিয়া এমইপি ও রফতানি শুল্ক প্রত্যাহারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এ পদক্ষেপ বিশ্ববাজারে ভারতীয় রফতানিকারকদের আরো শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দেবে।’ (খবরঃ বিজনেস রেকর্ডার)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন