চীন ও ব্রিটেন শুক্রবার নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সমঝোতামূলক করার দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বেইজিং সূচনা হিসেবে নতুন লেবার সরকারের “ প্রায়োগিক” ভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনার প্রশংসা করে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি হচ্ছেন গত ছয় বছরে চীন সফরকারি দ্বিতীয় শীর্ষ কুটনীতিক এবং তার সফর এ বিষয়টিই তুলে ধরে যে বেশ কিছু তীব্র মতভেদ সত্ত্বেও ব্রিটেন বেইজিং ‘এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কৌশলগত ভাবে এগুচ্ছে।
বেইজিং ‘এর দিয়াওতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, “ চীন-ব্রিটেন সম্পর্ক এখন এক নতুন সূচনায় রয়েছে। বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যকার প্রতিযোগিতা এই যুগের পটভূমি হতে পারে না”। ল্যামি বলেন জলবায়ু, জ্বালানি বিজ্ঞান বানিজ্য ও প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে “পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতার” পথ খুলেছে তবে তিনি সতর্ক করে দেন যে ব্রিটেন “সব সময়ে তার জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধকিার দিবে”।
তিনি আরও বলেন বেইজিং ও লন্ডনকে “দেখাতে হবে যে আমাদের মতো দেশগুলিকে পৃথক ইতিহাস ও দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও জটিল চ্যালেঞ্জগুলির প্রায়োগিক সমাধান বের করতে হবে”। জুলাই মাসে নির্বাচিত লেবার সরকার দেখাতে চাইছে যে তারা চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে, অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে সহযোগিতায় ভারসাম্য আনতে চাইছে যদিও ইউক্রেনে রাশয়িার যুদ্ধে বেইজিং ‘এর সমর্থন একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওয়াং আরও বলেন যে বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে লেবার দলের নতুন মডেলকে “ইতিবাচক” হিসেবে দেখে কারণ এটি “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বর্তমান প্রয়োজনের সঙ্গে… সামঞ্জস্যপূর্ণ”।
ল্যামি, শুক্রবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ও উপ প্রধানমন্ত্রী ডিং ঝুজিয়াং এর সঙ্গে বেইজিং ‘এ বৈঠক করবেন তার পর শনিবার সাংহাই এ যাবেন যেখানে তিনি চীনে অবস্থানরত ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলিত হবেন। এই সফরের আগে এক বক্তব্যে ল্যামি বলেন চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা “ যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয়” এবং তিনি আরও বলেন যে তিনি আশা করছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সামনে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং বিশ্বে পরিবেশের রূপান্তরণের প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করবেন।
ল্যামির এই সফরে বড় রকমের কোন কুটনৈতিক সমঝোতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন মুখপাত্র মাও নিং বলেন যে এই বৈঠকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর আলোকপাত করা হবে।
পূর্ববর্তী সরকারের আমলে চীনের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক মানবাধিকার , হংকং ও চীনা গুপ্তচরের অভিযোগ সংক্রান্ত ব্যাপারে বেশ তিক্ত ছিল। রয়টার এই সংবাদটি দেওয়ার পর যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্বে ব্যবহারের জন্য দূর পাল্লার ড্রোন উৎপাদনে রাশিয়া চীনের সঙ্গে একটি অস্ত্র কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছে, ব্রিটেন জানায় যে তারা এ ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। গত দশকে ব্রিটেন চীনের সঙ্গে তার সম্পর্কে বড় রকমের পরিবর্তন এনেছে। ব্রিটেন ইউরোপে চীনের সব চেয়ে বড় সমর্থক হতে চায় এ রকম কথআ বলার পর ব্রিটেন আবার চীনের কঠোর সমালোচক হয়। এখন আবার নতুন লেবার সরকারের অধীনে তারা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায়।
এ দিকে আবার বানিজ্য প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভঙ্গুর সম্পর্কের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। চীন হচ্ছে ব্রিটেনের ষষ্ঠ বৃহত্তম বানিজ্যিক অংশীদার । ব্রিটিশ সরকারের হিসেব মতো ব্রিটেনের মোট বানিজ্যের ৫% হয় চীনের সঙ্গে। (সূত্রঃ ভয়েস অব আমেরিকা)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন