কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একদিকে যেমন প্রযুক্তি ও শিল্প খাতে বড় পরিবর্তন আনছে, অন্যদিকে এর বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন উদ্বেগ। বড় বড় ডাটা সেন্টারে যখন এআই মডেল প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তখন হঠাৎ করেই বিপুল পরিমাণে বিদ্যুতের চাহিদা দেখা দেয়। এতে বিদ্যুৎ গ্রিডের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। সামনের দিনগুলোয় বিশ্বব্যাপী এ সংকট আরো প্রকট হবে বলে আশঙ্কা তাদের। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ যেখানে এমনিতেই অনিয়মিত, সেখানে এমন আচমকা চাহিদা সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হিতাচি এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আন্দ্রেয়াস শিয়েরেনবেক বলেন, ‘এআইনির্ভর ডাটা সেন্টারগুলো হঠাৎ করেই অনেক বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। যখন এআই অ্যালগরিদম প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিদ্যুৎ চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ আচমকা চাপ বিদ্যুৎ গ্রিড পরিচালনায় বড় সমস্যা তৈরি করছে।’
তিনি আরো জানান, অন্যান্য শিল্পে এমন আচমকা বিদ্যুৎ ব্যবহার করার সুযোগ নেই। যেমন কোনো কারখানায় বড় মেশিন চালু করতে হলে আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানিকে জানাতে হয়। অথচ এআই-ডাটা সেন্টারগুলোকে এখনো এমন কোনো নিয়মের আওতায় আনা হয়নি। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ডাটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুৎ ব্যবহার দ্বিগুণ হয়ে ৯৪৫ টেরাওয়াট-ঘণ্টায় পৌঁছবে, যা বর্তমানে জাপানের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়েও বেশি।
শিয়েরেনবেক মনে করেন, সমস্যাটা শুধু বিদ্যুতের চাহিদা বেশি হওয়ায় নয়, বরং এ চাহিদা কখন কতটা বাড়বে তা আগে থেকে বোঝা যায় না। নবায়নযোগ্য শক্তির সরবরাহ যেমন প্রাকৃতিকভাবে ওঠানামা করে, তেমনি এআইয়ের বিদ্যুৎ চাহিদাও হঠাৎ অনেক বেড়ে যায়। ফলে পরিস্থিতি আরো অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠছে। তবে অনেক বিশ্লেষক এমন পরিস্থিতিতে আশার দিকও দেখছেন। ওসলোভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রাইস্তাদ এনার্জি বলছে, যদি টেক কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট সময় বেছে এআই মডেল প্রশিক্ষণ দেয়, তাহলে তা গ্রিডকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এআই প্রযুক্তি যত দ্রুত এগোচ্ছে, বিদ্যুৎ অবকাঠামো যদি সে গতিতে উন্নত হতে না পারে, তাহলে সামনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে।
ভবিষ্যতের আরো জটিল ও শক্তিশালী এআই মডেল চালাতে গেলে অনেক বেশি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দরকার হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ গ্রিড সে চাহিদা পূরণে প্রস্তুত না থাকলে পুরো সিস্টেমেই অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তাই এখনই সময় প্রযুক্তি খাত, জ্বালানি খাত ও নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করার। ভবিষ্যতের এআই ব্যবহারের সঙ্গে তাল মেলাতে বিদ্যুৎ অবকাঠামোকেও শক্তিশালী ও পরিকল্পিতভাবে আধুনিক করতে হবে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন