বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম চলতি ২০২৫ পঞ্জিকাবর্ষের বাকি সময়জুড়ে স্থিতিশীল থাকতে পারে। গবেষণা সংস্থা বিএমআই (ফিচ সলিউশনসের একটি ইউনিট) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ফিউচার মার্কেটে মালয়েশিয়ার বুরসা ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত পাম অয়েলের গড় দাম থাকতে পারে টনপ্রতি ৪ হাজার ১৫০ রিঙ্গিত (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, ৯৭৮ ডলার ৫৪ সেন্ট)। বছরের বাকি সময় জুড়ে ভোজ্যতেলটির দাম টনপ্রতি ৩ হাজার ৮০০ (৪৯৬ ডলার ২ সেন্ট) থেকে ৪ হাজার রিঙ্গিতের (৯৪৩ ডলার ১৭ সেন্ট) মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।
মজুদ কমে যাওয়ায় সম্প্রতি পাম অয়েলের আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। একই সময় চীনে মজুদ কমছে। তাই এ দেশও সামনের দিনগুলোয় আমদানি বাড়াতে পারে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার বায়োফুয়েল নীতির কারণে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। তবে চাহিদা বাড়লেও বাজারে এর প্রভাবকে সীমিত করে তুলেছে পণ্যটির উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্য। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার পর্যাপ্ত মজুদও দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ করছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরবরাহ ও চাহিদার এমন ভারসাম্যের কারণে ২০২৫ সালের বাকি সময়ে পাম অয়েলের দাম স্থিতিশীল থাকবে।
২০২৫-২৬ (অক্টোবর-সেপ্টেম্বর) মৌসুমে বিশ্বব্যাপী পাম অয়েল উৎপাদন ৮ কোটি ৬ লাখ টনে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছে বিএমআই, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় ১ কোটি ৯৫ লাখ ও ইন্দোনেশিয়ায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টন পাম অয়েল উৎপাদন হতে পারে।
মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটিতে অপরিশোধিত পাম অয়েল উৎপাদন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। পরের প্রান্তিকে (এপ্রিল-মে) উৎপাদন ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৩৫ লাখ টনে পৌঁছেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারের সরবরাহ ঘাটতি কিছুটা কমেছে। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান শক্তিশালী মজুদ পরিস্থিতি বিশ্ববাজারে দামের বড় কোনো উল্লম্ফন ঠেকাতে ভূমিকা রাখবে।
বিএমআই জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী পাম অয়েলের চাহিদা ১ শতাংশ বেড়ে ৭ কোটি ৮৩ লাখ টন হতে পারে। এ সময়ে উৎপাদন উদ্বৃত্ত ১২ লাখ থেকে বেড়ে ২৩ লাখ টনে পৌঁছবে।
বিশ্বের শীর্ষ ভোজ্যতেল আমদানিকারক দেশ ভারত। দেশটির চাহিদা ও আমদানি তথ্য বৈশ্বিক পাম অয়েলের বাজারের বড় প্রভাবক। ভারতে পাম অয়েলের চাহিদা ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৮৭ লাখ টনে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ), যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। সলভেন্ট এক্সট্র্যাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক বি ভি মেহতা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমানে পাম অয়েল সবচেয়ে সস্তা ভোজ্যতেল। কয়েক মাস আগে এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিল, ফলে তখন চাহিদা কমে যায়। ইন্দোনেশিয়ার বায়োফুয়েল ম্যান্ডেট (বি৪০) বাস্তবায়নও তখন দাম বাড়ার পেছনে বড় কারণ ছিল।’ মেহতা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের পাম অয়েল আমদানি ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টনের মধ্যে থাকতে পারে। চীনেও সামনের দিনগুলোয় চাহিদা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিএমআই। ২০২৫-২৬ মৌসুমে দেশটির পাম অয়েল আমদানি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৬৭ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন