হোয়াইট হাউজ কঠোর অবস্থান নিলেও অন্যান্য দেশগুলোও সমান কঠোর। যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেকে শুল্ক-প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলছে, বাকি বিশ্ব তখন নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য-ভারত, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন-কানাডার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চুক্তিই তার উদাহরণ। পারস্পরিক শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়ায় আংশিক বিরতির পর ৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি সম্পাদনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাস্তবে, ৯ জুলাই ট্রাম্পের প্রথম সময়সীমা পর্যন্ত নয়টি চুক্তিও সম্পন্ন হচ্ছে না। খবর বিবিসি।
নির্ধারিত সময়সীমা ৯ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এটি পরবর্তীতে আরো বাড়তে পারে। এখানে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের আসল অক্ষমতা লুকাতে পারছে না। সময়সীমা বাড়ানো দেখে সবাই বুঝে যাচ্ছে তারা চুক্তি করতে পারছে না। তবে এবার এই বিলম্বের কারণে আর্থিক বাজারে আগের মতো অস্থিরতা তৈরি হয়নি। বাজার বিশ্বাস করছে ধারাবাহিক বিলম্ব ঘটবে। অর্থাৎ, ‘ট্রাম্প সবসময় শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসেন’ নীতিটাই দেখা যাবে। তবে এই মানসিকতা সব পক্ষের অনীহা বাড়িয়ে নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ট্রাম্প প্রশাসনের চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থতা। এই চিঠিগুলো মূলত সেই ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি। হোয়াইট হাউজ কঠোর অবস্থান নিলেও অন্যান্য দেশগুলোও সমান কঠোর। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রথম দুইটি চিঠিতে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যা কার্যত তাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
জাপান তাদের অসন্তোষ লুকায়নি। দেশটির অর্থমন্ত্রী এ ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে, তাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঋণপত্র আছে। চাইলে তারা এটা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ দিতে পারে। বাকি বিশ্ব দেখছে যে, যখন বাণিজ্যযুদ্ধ বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে, তখনই মার্কিন বাজারে অস্থিরতা বাড়ে, খুচরো বিক্রেতারা উচ্চমূল্য এবং পণ্যস্বল্পতা নিয়ে হোয়াইট হাউসকে সতর্ক করে দিচ্ছে। এখনো আদালতে একটি গ্রহণযোগ্য মামলা চলছে, যা এই শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। তবে বিশ্ব এখন এরইমধ্যে উল্টে যাওয়া বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সংখ্যাগত প্রভাব দেখতে শুরু করেছে। ডলারের মান এ বছর অনেক মুদ্রার বিপরীতে ১০% হ্রাস পেয়েছে। বেসেন্টের মনোনয়ন শুনানিতে বলা হয়েছিল, ডলারের মান বৃদ্ধির সম্ভাবনা শুল্কের ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি প্রশমিত করবে। বাস্তবে ঠিক উল্টো হয়েছে। বাণিজ্য পরিসংখ্যানও পরিবর্তিত হচ্ছে। শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে বিপুল মজুত করা হয়েছিল, পরবর্তীতে বড় ধরনের পতন ঘটেছে।
এদিকে, এ বছর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রফতানি ৯ দশমিক ৭% হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যত্র তা ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৭ দশমিক ৪%, আসিয়ান জোটের ১০টি দেশে ১২ দশমিক ২% এবং আফ্রিকায় ১৮ দশমিক ৯% বৃদ্ধির তথ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেকে শুল্ক-প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলছে, বাকি বিশ্ব তখন নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য-ভারত, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন-কানাডার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চুক্তিই তার উদাহরণ। উল্লেখযোগ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর শুল্কহার এখন প্রায় ১৫%, যেখানে গত ৪০ বছরে এটি ২% থেকে ৪% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই হার চিঠিতে প্রস্তাবিত নতুন শুল্কের আগের। বৈশ্বিক বাজার এখনো শান্ত। কিন্তু এই পরিস্থিতি স্থায়ী নাও হতে পারে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন