গত ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতো। তিন মাস ধরে চলা আলোচনার পর বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি এ তথ্য জানান।
গত ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতো। সোমবারের ঘোষণায় বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন শুল্কহার নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের ঘোষিত ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
শুরুতে এই শুল্ক ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার ও লাওসের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়া ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ, বসনিয়া ৩০ শতাংশ, সার্বিয়া ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চূড়ান্ত শুল্কের পরিমাণ উল্লেখ করে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে সোমবার চিঠি পাঠান ট্রাম্প। এসব চিঠি ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, সামনে আরও কিছু দেশকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হতে পারে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে জানান, ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেওয়া চিঠির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির জন্য নতুন একটি ডকুমেন্টস পাঠিয়েছে।
সেই ডকুমেন্টস-এ কি আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশ বড় ডকুমেন্টস, এখনো পুরোটা পড়া হয়নি। এটি পরে দেখতে হবে যে তারা কি চেয়েছে এবং চুক্তি হলে তারা কতটা রিভিউ করবে।’
বাড়তি শুল্ক নিয়ে আজ বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বৈঠক হবে জানিয়ে সচিব বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র থেকে থেকে মিটিং এ যোগ দেবেন এবং সচিব অনলাইনে যুক্ত হবেন।
প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা ট্রাম্পের চিঠি টিবিএস পাঠকদের জন্য বাংলা অনুবাদে দেওয়া হলো:
দ্য হোয়াইট হাউস
ওয়াশিংটন
জুলাই ৭, ২০২৫
মাননীয়
মুহাম্মদ ইউনূস
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা
প্রিয় জনাব ইউনূস,
আপনাকে এই চিঠি পাঠানো আমার জন্য অনেক সম্মানের, যাতে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দৃঢ়তা ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন রয়েছে। আপনাকে এই চিঠি পাঠানো আমার জন্য একটি বড় সম্মান, কারণ এটি আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের শক্তি ও প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে, এবং এই সত্যও তুলে ধরে যে যুক্তরাষ্ট্র আপনার মহান দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। তবুও, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা আপনার সঙ্গে অগ্রসর হব, তবে তা হবে আরও সুষম ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে। অতএব, আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশ নিতে, যা নিঃসন্দেহে বিশ্বের এক নম্বর বাজার। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আমরা বহু বছর আলোচনা করেছি, এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, আমাদের এই দীর্ঘমেয়াদি ও অত্যন্ত স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি থেকে সরে আসতে হবে, যা বাংলাদেশ সরকারের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিমালা এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের সম্পর্ক, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কখনোই পরস্পর সমান ছিল না। ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে, যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যেকোনো এবং সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আমরা মাত্র ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করব, যা খাতভিত্তিক অন্যান্য শুল্কের বাইরে আলাদাভাবে কার্যকর হবে। যেসব পণ্য উচ্চ শুল্ক এড়াতে অন্য দেশে হয়ে পাঠানো হবে, সেগুলোর ওপর সেই উচ্চ হারের শুল্কই আরোপ করা হবে। অনুগ্রহ করে বুঝতে চেষ্টা করুন, এই ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার আমাদের আপনার দেশের সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতির বৈষম্য দূর করতে যে পরিমাণ প্রয়োজন, তার তুলনায় অনেক কম। আপনি যেমন জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরি বা উৎপাদন স্থাপন করে, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। বরং আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব যাতে অনুমোদন দ্রুত, পেশাদারভাবে ও নিয়মিতভাবে দেওয়া যায়। অন্যভাবে বললে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এসব অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হবে।
যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্কহার বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনি যে পরিমাণে শুল্ক বাড়াবেন, সেটি আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে। অনুগ্রহ করে বুঝুন, এই শুল্কগুলো জরুরি, কারণ দীর্ঘ বছর ধরে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিমালা এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে টেকসইহীন বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধরানোর প্রয়োজন রয়েছে। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতির জন্য এবং প্রকৃতপক্ষে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।
আমরা ভবিষ্যতেও বহু বছর ধরে আপনার বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এতদিন ধরে বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার উন্মুক্ত করতে চান, এবং আপনার শুল্ক ও অশুল্ক নীতিমালা ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাহার করেন, তাহলে আমরা, সম্ভবত, এই চিঠির বিষয়বস্তু পুনর্বিবেচনা করতে পারি। এই শুল্ক হার সম্পর্কের ভিত্তিতে ওপরে বা নিচে সামঞ্জস্য করা হতে পারে। আপনি কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হতাশ হবেন না।
এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভ কামনাসহ, আমি
বিনীত,
ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন