হরমুজ প্রণালীতে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান: মার্কিন সূত্রের দাবি – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

হরমুজ প্রণালীতে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান: মার্কিন সূত্রের দাবি

  • ০৩/০৭/২০২৫

ইরানের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামারে প্রেসিডেন্টের সফল নেতৃত্ব, হুথিদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান এবং সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ফলে হরমুজ প্রণালী এখনও উন্মুক্ত, নৌচলাচলের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ইরান উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় হরমুজ প্রণালীতে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর হরমুজ প্রণালী অবরোধ এবং সেখানে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান। আর তেহরানের হরমুজ অবরোধের প্রস্তূতির বিষয়টি জেনে উদ্বেগ আরও বেড়েছিল ওয়াশিংটনের। আজ বুধবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তাদের মতে, ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এই মাইন বসানোর প্রস্তুতি নেয় তেহরান। এসব প্রস্তুতি ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই সামুদ্রিক পথটি বন্ধ করতে ইরান সত্যিই প্রস্তুত ছিল। তবে ইরান যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করত, তাহলে সংঘাত আরও বাড়ত এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পরতো। বিশ্বের মোট জ্বালানি পরিবহনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হয় এই প্রণালী হয়ে। ফলে এটি বন্ধ হলে জ্বালানি বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিতে পারত। মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমেছে। এর অন্যতম কারণ এই সংঘাতে এখনও পর্যন্ত তেল সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেনি। ২২ জুন তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অচল করে দেওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর পর, ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ বন্ধের একটি প্রস্তাব পাশ করে। যদিও এটি চূড়ান্ত নয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ‘প্রেস টিভি’ সে সময় এ তথ্য জানায়। ইরান এর আগেও কয়েকবার প্রণালীটি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত এই পদক্ষেপ নেয়নি। ইসরায়েল-ইরান বিমান হামলার সময় তেহরান ঠিক কখন মাইনগুলো বসিয়েছিল তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স। মাইনগুলো পরবর্তীতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে কি না, তাও স্পষ্ট নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কীভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে ইরানি জাহাজে মাইন ছিল, তাও জানায়নি সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে সাধারণত স্যাটেলাইট চিত্র, গোপন মানব উৎস অথবা উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ে এমন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ইরানের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামারে প্রেসিডেন্টের সফল নেতৃত্ব, হুথিদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান এবং সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ফলে হরমুজ প্রণালী এখনও উন্মুক্ত, নৌচলাচলের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ইরান উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।’ পেন্টাগন ও জাতিসংঘে ইরানি মিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, মার্কিন সরকার মাইন বসানোকে ইরানের কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের মতে, তারা প্রণালী বন্ধে সত্যিই প্রস্তুত ইরান হয়তো ওয়াশিংটনকে এটা বোঝাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত, যা পারস্য উপসাগরকে দক্ষিণে ওমান উপসাগর এবং সেখান থেকে আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। প্রণালীটির সংকীর্ণতম অংশ মাত্র ২১ মাইল (৩৪ কিলোমিটার) প্রশস্ত, যার মধ্যে উভয় দিকের জাহাজ চলাচলের পথই মাত্র ২ মাইল চওড়া। ওপেক সদস্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং ইরাক তাদের বেশিরভাগ অপরিশোধিত তেল এই প্রণালী হয়ে মূলত এশিয়ার বাজারে রপ্তানি করে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকারক কাতারও তার প্রায় সব এলএনজি হরমুজ প্রণালী দিয়েই পাঠায়।
ইরান নিজেও তার অধিকাংশ অপরিশোধিত তেল এই পথেই রপ্তানি করে। তাই খুব সহজে ইরান এই প্রণালী বন্ধ করার কথা ভাববে না। তারপরও প্রয়োজনে যেন এই পদক্ষেপ নিতে পারে সেজন্য যথেষ্ট সামরিক প্রস্তুতি বজায় রেখেছে তেহরান। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছিল, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইরান ছোট, উচ্চগতিসম্পন্ন নৌকার মাধ্যমে দ্রুত মোতায়েনযোগ্য ৫ হাজারেরও বেশি নৌ-মাইন মজুত রেখেছিল। এই অঞ্চলে বাণিজ্য রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বাহরাইনে অবস্থিত মার্কিন পঞ্চম নৌবহর। সাধারণত সেখানে চারটি মাইন প্রতিরোধী যুদ্ধজাহাজ রাখা হয়, যদিও বর্তমানে সেগুলো ‘লিটোরাল কমব্যাট শিপ’ (এলসিএস) নামে পরিচিত আরও আধুনিক জাহাজ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, যেগুলোরও মাইন-বিরোধী ক্ষমতা রয়েছে। তবে ইরানের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় মার্কিন মাইন-বিরোধী যুদ্ধজাহাজগুলো অস্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়, যদিও ইরান কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরান ভবিষ্যতে আরও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us