২০২৫ সালে মার্কিন ডলারের দাম রেকর্ড মাত্রায় পতনের কারণ কী – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন

২০২৫ সালে মার্কিন ডলারের দাম রেকর্ড মাত্রায় পতনের কারণ কী

  • ০২/০৭/২০২৫

ডলারের রিজার্ভ ঝুঁকিতে পড়ায় সোনার দিকে ঝুঁকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ২০২৫ সালে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। অন্যদিকে ইউরো, ইয়েন ও ইউরোপীয় সরকারি বন্ডের চাহিদা বেড়েছে। ইউরোর মান ডলারের বিপরীতে ১৩ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১৭ ডলারে পৌঁছেছে। ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় ধসের মুখে পড়েছে মার্কিন ডলার। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিমালা—বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপ, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ও বিপুল ঘাটতির কর বিল—বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করেছে। এই অনাস্থা থেকে বেড়েছে ডলার বিক্রির হার। যার ফলে ডলার তার দীর্ঘদিনের ‘নিরাপদ মুদ্রা’র মর্যাদা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। খবর আল জাজিরা।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ডলার সূচক ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ২ এপ্রিল ঘোষিত শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনীতির প্রতি আস্থা নষ্ট করেছে। ‘লিবারেশন ডে’ নামে অভিহিত সেই দিনটির তিন দিনের মধ্যেই এস এন্ড পি-৫০০ শেয়ার বাজার থেকে ৫ হাজার কোটি ডলার হারিয়ে যায়। মার্কিন ট্রেজারি বন্ড থেকেও ব্যাপক বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে, বেড়েছে ঋণের খরচ। বাজারে আতঙ্ক ঠেকাতে ট্রাম্প ৯ এপ্রিল শুল্কের ওপর ৯০ দিনের বিরতি ঘোষণা করেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ এখন ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট নামের কর সংস্কার বিল। বিলটি ২০১৭ সালের কর ছাড় বহাল রাখবে, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ খাতে কাটছাঁট করবে এবং বিপুল পরিমাণে সরকারি ঋণ বাড়াবে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, এটি ২০৩৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বাড়াবে। বর্তমানে দেশটির ঋণ ৩ লাখ ৬২০ হাজার কোটি ডলার, যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১২৪ শতাংশ। বিলটি পাস হলে এই হার আরও বাড়বে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যয় হ্রাস প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র অধীনে ব্যয় হ্রাসের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। শুল্কের মাধ্যমে কিছু রাজস্ব আদায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমেরিকান ভোক্তাদের পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য চাপ সেই খরচ বহন করছে। ট্রাম্পের অনিশ্চিত নীতির কারণে মে মাসে মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দেয়। ফেডারেল রিজার্ভের ওপর ট্রাম্পের রাজনৈতিক চাপের ফলে সুদের হার কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ ২ থেকে ৩ দফা হার কমানোর পূর্বাভাস মিলছে।

ডলারের রিজার্ভ ঝুঁকিতে পড়ায় সোনার দিকে ঝুঁকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ২০২৫ সালে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। অন্যদিকে ইউরো, ইয়েন ও ইউরোপীয় সরকারি বন্ডের চাহিদা বেড়েছে। ইউরোর মান ডলারের বিপরীতে ১৩ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১৭ ডলারে পৌঁছেছে। মার্কিন ডলার দুর্বল হলে রফতানি প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে। তবে শুল্কনীতি ও বাজারের অনিশ্চয়তা এই ইতিবাচক প্রভাবকে আটকে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের পতন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভালো খবর হতে পারে। জাম্বিয়া, ঘানা ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ডলারে নেয়া ঋণ পরিশোধের খরচ কমবে। ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, চিলির মতো পণ্যনির্ভর দেশগুলোও রফতানি আয়ে সুবিধা পেতে পারে। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের আধিপত্য এখনো অটুট। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ৫৭ শতাংশ ডলারে রয়েছে। আন্তর্জাতিক বন্ডের ৭০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক আমানতের ৬০ শতাংশ ডলারে। তবুও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন সম্পদের ওপর নির্ভরতা নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু হয়েছে। ব্যাংক জে সাফরা সারাসিন-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্সটেন জুনিয়াস বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছে তারা মার্কিন সম্পদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তারা ধীরে ধীরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে।’

ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্যে, ডলারের অতিমূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারক ও শ্রমিকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা স্টিফেন মিরান বলেন, ‘ডলারের অতিমূল্যায়ন আমাদের অর্থনীতির প্রতিযোগিতার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে। আর শুল্ক তারই প্রতিক্রিয়া।’ অর্থনীতিবিদদের মতে, শিগগিরই ডলার তার বিশ্ব রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা হারাবে না, তবে তার দুর্বলতা আরো বাড়তে পারে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ডলারের মান আরো কমবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us