উন্নত প্রযুক্তি ও ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারীর চাহিদা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে পরিবর্তন আনছে। গত বছর বিশ্বজুড়ে বাজারটির আকার দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বাজার প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলারের পৌঁছবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বাজার গবেষণা ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৫-৩০ সাল পর্যন্ত বাজারটি গড়ে প্রতি বছর ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারে (সিএজিআর) বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি বলতে লেখা, ছবি, অডিও ও ভিডিওসহ বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু তৈরি ও অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশ বা প্রচারের কার্যক্রমকে বোঝায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ বাজার বাড়ার পেছনে অন্যতম চালক হিসেবে কাজ করছে স্মার্টফোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের প্রসার। বর্তমানে হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন-কেন্দ্রিক কনটেন্ট তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) ও অগমেন্টেড রিয়ালিটির (এআর) মতো প্রযুক্তির ব্যবহারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বাজারে সর্বাধিক আয় এসেছে ভিডিও কনটেন্ট থেকে। ভিডিওর প্রতি ব্যবহারকারীদের আগ্রহ ও স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির কারণে এ প্রবণতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণা বলছে, মানুষ এখন টেক্সট বা ছবির তুলনায় ভিডিও কনটেন্ট দেখতে বেশি পছন্দ করে। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বা সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হয়ে কনটেন্ট তৈরির প্রবণতাও বাড়ছে। ফলে এগুলো সহজেই ‘ভাইরাল’ বা শেয়ার হয়ে যাচ্ছে।
কনটেন্ট মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ জে বায়ার বলেন, ‘কনটেন্ট নিজেই একটি শক্তিশালী মাধ্যম। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সেই কনটেন্টকে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে চালিকাশক্তির কাজ করে।’
পাশাপাশি দর্শক কী দেখছে, কতক্ষণ দেখছে, কী পছন্দ করছে এ বিষয়গুলো কনটেন্ট নির্মাতারা এখন বিশ্লেষণ করছেন। এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা কনটেন্টের মান বা পরিকল্পনা আরো ভালোভাবে ঠিক করতে পারছেন।
বাজার গবেষণা সংস্থা মার্কেট রিসার্চ ফিউচার বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি ভিডিও কনটেন্ট তৈরির প্রসারে বড় ভূমিকা রাখছে নেটফ্লিক্স ও ডিজনি প্লাসের মতো ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন পণ্যের ডেমো ও প্রচারের জন্য ভিডিওকে বেশি ব্যবহার করছে। অন্যদিকে তথ্য ও বিনোদন গ্রহণের একটি পছন্দনীয় মাধ্যম হিসেবে পডকাস্ট, সংগীত ও অডিওবুকের মতো অডিও কনটেন্টও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ডিজিটাল কনটেন্টের বাজারটি বিভিন্ন খাতে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যম ও বিনোদন, শিক্ষা, ব্যবসা ও বিপণন, খুচরা বিক্রয় ও ই-কমার্স এবং স্বাস্থ্যসেবা। এসব খাত ডিজিটাল কনটেন্টের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহারের মাধ্যমে বাজার প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভবিষ্যতে গণমাধ্যম ও বিনোদন খাত ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বাজারে সর্বোচ্চ আয়ের খাত হিসেবে অবস্থান করবে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। এর পেছনে রয়েছে ভিডিও কনটেন্টের চাহিদা বৃদ্ধি, অনলাইন স্ট্রিমিং পরিষেবা ও সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা। এছাড়া শিক্ষা খাতেও ডিজিটাল কনটেন্টের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা ও ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন