ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা বিষয়ক সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে ইরানি সংসদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য এসমাঈল কাওসারি। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রেস টিভির খবরে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এসমাঈল কাওসারি বলেন, ‘মজলিস এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার জবাবে আমরা এ পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকে।’
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম প্রথম সপ্তাহেই ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হরমুজ প্রণালি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহন রুট। প্রতিদিন ১৭-১৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত হয়, যা বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ। এছাড়া কাতারসহ কয়েকটি শীর্ষ এলএনজি (প্রাকৃতিক গ্যাস) রফতানিকারক দেশ এখান থেকেই বিশ্ববাজারে গ্যাস পাঠায়। ইরানের উপকূল ঘেঁষা সরু এ চ্যানেল সংযুক্ত করেছে জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরকে। পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত ও বাহরাইনের জ্বালানি তেল রফতানির প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে এ পথের ওপর। ওমান ও ইরানের মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এ সামুদ্রিক পথ দিয়ে দৈনিক দেড় কোটি ঘনমিটারের মতো এলএনজি পরিবাহিত হয় বলে ইন্টারন্যাশনাল গ্যাস ইউনিয়নের (আইজিইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ইরান অতীতেও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে, বিশেষত যখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। তবে ইতিহাসে কখনই তারা বাস্তবিক অর্থে প্রণালিটি বন্ধ করেনি।
যদি ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকে সত্যিই বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ এ সামুদ্রিক পথ বন্ধ করা চূড়ান্ত ঘোষণা আসে, তবে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপরই পড়বে তীব্র নেতিবাচক প্রভাব। বিশ্বজুড়ে নতুন করে বাড়িয়ে তুলতে পারে মূল্যস্ফীতি। এর আঁচ এড়াতে পারবে না বাংলাদেশও। কারণ কাতার থেকে কেবল হরমুজ প্রণালি দিয়েই এলএনজি আমদানি করতে হয়।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) এক প্রতিবেদন অনুসারে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত জ্বালানি তেলের প্রায় ৭০ শতাংশেরই ভোক্তা দক্ষিণ এশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইনসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো। এছাড়া বাংলাদেশ ও শ্রীলংকাও সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। ফলে হরমুজ প্রণালিতে যেকোনো ধরনের প্রভাবের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে এসব দেশের জ্বালানি তেলের বাজারেও। এ প্রণালি বন্ধে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত। দেশটির নিজের চাহিদার ৮৫ শতাংশের বেশি তেল বাইরে থেকে কিনতে হয়। এ আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে আসে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন