ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিঃ যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা কমাতে মরিয়া চীনা ব্যবসায়ীরা – The Finance BD
 ঢাকা     বৃহস্পতিবার, ২৬ Jun ২০২৫, ০২:১৯ অপরাহ্ন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিঃ যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা কমাতে মরিয়া চীনা ব্যবসায়ীরা

  • ২৩/০৬/২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বিবাদে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটির বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদাররা। বিশেষ করে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠায় চীনা ব্যবসায়ীদের সামনে চ্যালেঞ্জ তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক নতুন ক্রেতা খুঁজতে হন্যে হয়ে ছুটছেন তারা। এমনকি বিভিন্ন বাজারে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে চীনা কোম্পানিগুলো, কমাতে হচ্ছে পণ্যের দাম। খবর এফটি।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্চ হারে শুল্ক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে। তবে বিকল্প বাজারে রফতানি কিছুটা বাড়ায় আংশিকভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া গেছে। গত মাসে ইউরোপে চীনের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়েছে, যার মধ্যে জার্মানিতে বেড়েছে ২২ শতাংশ। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোয় চীনা রফতানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমায় যে ক্ষতি হবে তা অন্য বাজারগুলোয় কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে চীনের উৎপাদকরা। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতোই দেশটির অর্থনীতিতে অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে থাকবে রফতানি খাত। কারণ এখনো আবাসন খাতে মন্দা ও দুর্বল ভোক্তা আস্থার মতো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে চীনে। ভোক্তা পর্যায়ে দুর্বলতার উল্লেখ করে ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনবিষয়ক অর্থনীতিবিদ লিয়া ফাহি বলেন, ‘চীনকে যেহেতু রফতানি করতেই হবে, তাই তাদের পণ্য এখন অন্য দেশে যাবে। আমদানিকারক দেশগুলোকে চীনা পণ্যের ঢল সামলাতে হবে।’
এ প্রবণতার উদাহরণ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক প্রদেশ ঝেজিয়াং। এখানকার অনেক কারখানা মালিক যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় স্থিতিশীল বাণিজ্য অংশীদার বা খুবই প্রতিযোগিতামূলক হলেও বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারে নজর দিচ্ছেন। ক্যাম্পিং ও আউটডোর কিচেন পণ্য তৈরি করে ঝেজিয়াংয়ের শাওক্সিং সুলং আউটডোর টেকনোলজি। তারা এতদিন শুধু এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি করত। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক শিয়া শুকুন বলেন, ‘আমরা ইউরোপের মতো বাজারে নতুন ক্রেতা খুঁজতে চাই।’
গত মাসে ১০০ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি শুল্ক স্থগিত হলেও চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন গড় শুল্কহার এখনো ৫০ শতাংশেরও বেশি। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এ বাস্তবতায় ঝেজিয়াং উপকূলজুড়ে অনেক কারখানা নতুন বাজার খুঁজছে। বাতি নির্মাতা শাওক্সিং শাংইউ লিহুয়া ইলেকট্রনিক টেকনোলজির চেন জেবিন জানান, ২০২৪ সালে তাদের কারখানায় তৈরি পণ্যের ৬০ শতাংশ যেত যুক্তরাষ্ট্রে, এখন তা কমে হয়েছে ৩০ শতাংশ। ফলে মুনাফার হার কম হলেও তারা এখন ঘরোয়া বাজারে বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন। চেন জেবিন বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আপাতত বন্ধ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠানটি টেমুর মতো অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে নতুন ক্রেতা খুঁজছে। ঝেজিয়াং-ভিত্তিক পাওয়ার টুল প্রস্তুতকারক কিমোর ম্যানেজার ডরিস শিয়া জানান, তারা ইউরোপ, রাশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রফতানি সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে অভিষেকের শুরুতে চীনের পণ্যে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন। যার প্রভাব গত মার্চে লাস ভেগাসে এক ট্রেড শোতে দেখেছেন বলে জানান ডরিস শিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্টলে কোনো ক্রেতাই আসেনি।’ যুক্তরাষ্ট্রের পর গত বছর চীনের রফতানি গন্তব্যের শীর্ষে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এরপর রয়েছে পুনঃরফতানির জন্য নির্ভরশীল দেশ ভিয়েতনাম। পরের অবস্থান জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার। এদিকে চীনা পণ্যের হঠাৎ আমদানি বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় কমিশন এবং তা মোকাবেলায় ব্যবস্থাও নিচ্ছে। কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গিটার থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যের আমদানি হঠাৎ বেড়েছে এবং এর প্রধান উৎস ছিল চীন। যাকে নতুন এক ‘চীনা ধাক্কা’ বলে অভিহিত করেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার মাধ্যমে রফতানি করে এমন কিছু কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত পেন্সিল চু। তিনি বলেন, ‘যেসব কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলক কম রফতানি করে, তারা সরাসরি বাজারটি এড়িয়ে চলছে। অনেক কারখানাই এখন ইউরোপকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’ নতুন বাজার খোঁজার প্রবণতার মাঝে আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা কোম্পানিগুলো পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়েছে। আগে ইউরোপীয় খুচরা বিক্রেতা লিডল ও ইকিয়ায় বিচ আমব্রেলা বিক্রি করত ইউইং ট্যুরিজমের প্রডাক্টস। এখন যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর অনেক চীনা কোম্পানি ইউরোপমুখী হওয়ায় এ বাজারে ইউইংয়ের প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। ইউরোপীয় ক্রেতাদের সামনে বেছে নেয়ার সুযোগ বাড়ায় পণ্যের দামও পড়ে যাচ্ছে।
প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করে ঝেজিয়াং প্রদেশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির এক লাখ প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে প্রাদেশিক সরকার। তারা বিদেশী ট্রেড ফেয়ারে কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ ব্যয় বহন করছে। এছাড়া এক লাখ নতুন আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স বিক্রেতা তৈরিতে সহায়তা এবং রফতানি ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্সের জন্য ভর্তুকি বাড়াচ্ছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us