হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনা : ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে এই সমুদ্রপথ কেন গুরুত্বপূর্ণ? – The Finance BD
 ঢাকা     সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনা : ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে এই সমুদ্রপথ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • ১৫/০৬/২০২৫

হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম উর্ধ্বমুখী হতে পারে, জটিল হতে পারে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনেরও সামরিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরআইএনএনের বরাতে জানা যায়, কট্টরপন্থী সংসদ সদস্য এসমাইল কোসারি এই মন্তব্য করেছেন। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথ বন্ধ হলে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যেতে পারে এবং সেই সাথে ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পারস্য উপসাগর থেকে ওমান উপসাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রবেশের একমাত্র সমুদ্রপথ হলো হরমুজ প্রণালী। এর এক পাশে অবস্থিত আরব দেশগুলো, যাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্রসমূহ, এবং অন্য পাশে রয়েছে ইরান।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তেল রপ্তানি করা হয় হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায়। মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের মতে, বিশ্বে প্রতিদিন ব্যবহৃত মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালী দিয়ে পরিবহন করা হয়। সংস্থাটি একে বিশ্বের ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলবাহী চোকপয়েন্ট’ হিসেবেও উল্লেখ করেছে। প্রণালীর সবচেয়ে সরু অংশ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত হলেও এর ভেতরের নৌচলাচল পথ আরও সংকীর্ণ—ফলে এটি হামলা বা অবরোধের হুমকির জন্য সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধে উভয় দেশ উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছিল। ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত সেই সময়েও হরমুজ প্রণালী পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার সময় হরমুজের কাছে ফুজাইরাহ উপকূলে চারটি জাহাজে হামলা হয়। ওই ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করলেও তেহরান তা অস্বীকার করে। সংঘাতের সময় গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে হামলা চালিয়ে চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নতুন নয়। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরাও আরব উপদ্বীপের বিপরীত পাশে বাব আল-মানদেব প্রণালীতে একাধিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
হুথিদের এসব হামলায় লোহিত সাগর দিয়ে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হলেও বিকল্প হিসেবে আফ্রিকার চারপাশ ঘুরে দীর্ঘ পথে যাতায়াত সম্ভব। কিন্তু পারস্য উপসাগর থেকে হরমুজ প্রণালী ছাড়া কোনও জাহাজের সমুদ্র পাড়ি দেয়ার পথ নেই। ফলে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে শুধু উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল আমদানিকারক দেশগুলো নয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব দেশই অর্থনৈতিক চাপে পড়বে। এছাড়া, হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরানের জ্বালানী তেল রপ্তানির প্রধান রুট। ইরানের অর্থনীতির জন্য এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের মোট রপ্তানি আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসে জ্বালানী তেল রপ্তানির মাধ্যমে। ২০১৭ সালে ইরান ৬৬০০ কোটি ডলারের তেল রপ্তানি করেছে। তবে ইরানি সংসদ সদস্যের হুমকি সত্ত্বেও এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে তেহরান আদৌ প্রণালীটি বন্ধ করার মতো সামর্থ্য কিংবা রাজনৈতিক সদিচ্ছা রাখে কি না। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য নৌ-সামরিক উপস্থিতির কারণে, হরমুজ প্রণালী বন্ধের মতো পদক্ষেপের জবাবে সেখান থেকে প্রতিক্রিয়া আসা প্রায় নিশ্চিত।
পাশাপাশি, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে এতে যুক্তরাষ্ট্র-ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর জবাবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামরিক প্রতিক্রিয়া আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের সামরিক নেতাদের বাসভবন, সেনাঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়। এর পাল্টা জবাবে ইরান শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সহায়তা করলেও সরাসরি ইরানকে লক্ষ্য করে কোনো হামলা চালায়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানান, ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তেহরানও এখন পর্যন্ত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়নি।
যদিও ইরান এখনই হরমুজ প্রণালী বন্ধের সুনির্দিষ্ট হুমকি দেয়নি, তবে ইরানি সংসদ সদস্য এসমাইল কোসারির সাম্প্রতিক মন্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে—সংঘাত চলাকালে এই গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে হামলার বিষয়টি তেহরান সম্ভাব্য কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছে। এর আগে, ২০২৪ সালের এপ্রিলেও ইরানি বাহিনী হরমুজ প্রণালীর কাছে একটি কনটেইনার জাহাজ জব্দ করে। তার কিছুদিন আগে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় একাধিক কর্মকর্তা নিহত হন। এর জবাবে ইরান সীমিত পাল্টা হামলা চালায়, এবং ইসরায়েলও পাল্টা জবাব দেয়। ওই সময়ই ছিল দু’পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us