২০০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের প্রায় পুরোটাই আফ্রিকায় দান করবেন বিল গেটস

‘আমি মরলে মানুষ অনেক কিছু বলবে, কিন্তু আমি ধনী ছিলাম—এই কথাটি যেন না বলা হয়, সেই চেষ্টাই করছি।‘
গত মাসেই গেটস ঘোষণা দেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে তার সম্পদের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে (প্রায় ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ড)। আর এই সম্পদের ৯৯ শতাংশই দান করবেন তিনি। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন ধনকুবের বিল গেটস জানিয়েছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে তিনি তার বিশাল সম্পদের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করবেন আফ্রিকায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নে। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২০৪৫ সালের মধ্যে তার বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হবে। খবর বিবিসি।
৬৯ বছর বয়সী এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সম্প্রতি ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়ন সদর দপ্তরে দেয়া এক ভাষণে বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমে মানবিক সক্ষমতা বিকশিত করে আফ্রিকার প্রতিটি দেশকেই সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।‘
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সম্প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আগামী ২০ বছরে আমার সম্পদ বিলিয়ে দেব। এর অধিকাংশই ব্যয় করা হবে আফ্রিকার মানুষের জন্য—স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষা খাতে।‘ গত মাসেই গেটস ঘোষণা দেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে তার সম্পদের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে (প্রায় ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ড)। আর এই সম্পদের ৯৯ শতাংশই দান করবেন তিনি। আফ্রিকান ইউনিয়নের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোজাম্বিকের সাবেক ফার্স্ট লেডি গ্রাসা মাশেল। তিনি বলেন, ‘এই সংকটের মুহূর্তে গেটসের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, তিনি আমাদের এই রূপান্তরের যাত্রায় পাশে থাকবেন।‘
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার সহায়তা তহবিল, বিশেষত এইচআইভি/এইডস চিকিৎসা কর্মসূচির বাজেট বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছে। এতে আফ্রিকায় স্বাস্থ্যখাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গেটস বলেন, তার ফাউন্ডেশন আফ্রিকায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে এবং এখন প্রধানত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নেই জোর দেবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, একজন মায়ের সুস্বাস্থ্য ও সঠিক পুষ্টি, বিশেষ করে গর্ভধারণের আগে ও গর্ভকালীন সময়ে নিশ্চিত করতে পারলে সবচেয়ে ভালো ফল মেলে।‘
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তাদের তিনটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে— মায়ের ও শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অবসান, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত রাখা এবং লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া। গত মাসেই গেটস এক ব্লগ পোস্টে লেখেন, ‘আমি মরলে মানুষ অনেক কিছু বলবে, কিন্তু আমি ধনী ছিলাম—এই কথাটি যেন না বলা হয়, সেই চেষ্টাই করছি।‘
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, তার ৯৯ শতাংশ সম্পদ দান করার পরেও তিনি বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিলিয়নিয়ারই থেকে যাবেন। ১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস। সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি শিল্পে কোম্পানিটি অল্প সময়েই আধিপত্য বিস্তার করে। পরে তিনি ধীরে ধীরে ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ান—২০০০ সালে সিইও পদ থেকে এবং ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে, সমালোচকদের মতে, তার ফাউন্ডেশন দান করার মাধ্যমে কর ফাঁকির সুযোগ নেয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অস্বাভাবিক প্রভাব খাটায়।