ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, ঝাং এখন এশিয়ার তৃতীয় শীর্ষ ধনী। ভারতের মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানির পরেই তার অবস্থান।
টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং প্রথমবারের মতো চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়েছেন। বুধবার (২৬ মার্চ) প্রকাশিত তালিকায় তিনি বোতলজাত পানি ব্যবসায়ী ঝং শানশান ও টেনসেন্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা মা হুয়াতেংকে পেছনে ফেলেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৫৭.৫ বিলিয়ন ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, ঝাং এখন এশিয়ার তৃতীয় শীর্ষ ধনী। ভারতের মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানির পরেই তার অবস্থান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঝং শানশানের কোম্পানি নংফু স্প্রিং-এর আয় কমে যাওয়ায় তিনি শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছান। ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরক, ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টস ও টি. রো প্রাইস গ্রুপের মূল্যায়ন এবং কর্মীদের শেয়ার পুনঃক্রয়ের পরিকল্পনার ভিত্তিতে ঝাং ইমিংয়ের সম্পদ ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়েছে। বাইটড্যান্স ৩১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যে কর্মীদের শেয়ার কিনতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির গড় মূল্য ৩৬৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
টিকটকের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি, বাইটড্যান্সের জনপ্রিয় অ্যাপ নিয়ে চ্যালেঞ্জ এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি সংগীত প্রতিষ্ঠানের কিছুদিনের জন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে গান সরিয়ে নেওয়ার পরও চীনের শীর্ষ ধনী হওয়া ৪১ বছর বয়সী ঝাংয়ের জন্য এটি এক বড় অর্জন।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইটড্যান্সকে তাদের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রির জন্য ৭৫ দিনের সময়সীমা বাড়িয়ে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রেতা না পেলে অ্যাপটি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওরাকল কর্পোরেশন টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম কেনার একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এতে তারা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি নতুন মার্কিন প্রতিষ্ঠানে একটি ছোট অংশীদারিত্ব নিতে পারে। তবে অ্যাপটির শক্তিশালী অ্যালগরিদম চীনের হাতেই থাকতে পারে।
এদিকে, বাইটড্যান্স চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শিল্পের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির এআই চ্যাটবট ডৌবাও-এর ৭.৫ কোটি নিয়মিত সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির আগের ভিশন মডেল ডিপসিক এআই-এর মতোই বাজারের গড় দামের তুলনায় ৮৫ শতাংশ সস্তা। চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ফ্যামিলি বিজনেস রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক হাও গাও বলেন, ঝাং ইমিং পূর্ববর্তী মেড ইন চায়না’ বিলিয়নিয়রদের থেকে আলাদা, কারণ তার ব্যবসা বেশি উদ্ভাবনী এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
ঝাং ইমিং সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন। তিনি বিশাল সম্পদ অর্জন করেছেন বাইটড্যান্সে তার ২১ শতাংশ শেয়ার থেকে। বাইটড্যান্সের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্ম টিকটকের ১ বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। ঝাং ক্যারিয়ার শুরু করেন কুক্সুন ডটকম-এ একজন প্রকৌশলী হিসেবে। ২০০৯ সালে ‘প্রোপার্টি সার্চ সাইট’ ৯৯ফ্যাংডটকম নামে তার প্রথম ব্যবসা শুরু করার তিন বছর পরে ছেড়ে দেন। ২০১২ সালে বাইটড্যান্স প্রতিষ্ঠা করেন এবং টাউটিয়াও সংবাদ অ্যাপ চালু করেন। দুই বছরের মধ্যে এটির দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ মিলিয়নে পৌঁছায়। ২০১৬ সালে তিনি টিকটক চালু করেন এবং সেটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরে মিউজিকাল.এলওয়াই কেনেন এবং সেটি টিকটকের সাথে একীভূত করেন। বাইটড্যান্স এখন ভিডিও এবং নানা প্ল্যাটফর্মে এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি বাইটড্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে ইস্তফা দেন। তবে প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশেরও বেশি মালিকানা তার হাতেই রয়েছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন