২০২৪ সালে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) বার্ষিক গড় বেতন প্যাকেজ প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি ও করপোরেট মুনাফা বৃদ্ধিই বেতন বাড়ার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ সংস্থা ইকুইলারের যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে যেসব সিইও নিজ নিজ কোম্পানিতে টানা অন্তত দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্যে ৩৪৪ জনের বেতন প্যাকেজের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তাদের বার্ষিক গড় বেতন প্যাকেজ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এর বিপরীতে কোম্পানিগুলোর সাধারণ কর্মীদের গড় বেতন প্যাকেজ ছিল ৮৫ হাজার ৪১৯ ডলার, সেখানে বেতন বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
গত বছরে কোম্পানিগুলোর মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ও শেয়ারবাজারেও তাদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল। এ সময়ে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে ও কোম্পানিগুলোর গড় মুনাফা ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন সিইওদের বেতন যেন কোম্পানির কর্মদক্ষতা ও মুনাফার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত হয়। এতে বর্তমানে অধিকাংশ সিইওর বেতন কাঠামোর বড় একটি অংশ পারফরম্যান্সনির্ভর শেয়ারভিত্তিক প্রণোদনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এসব শেয়ার তারা কেবল তখনই গ্রহণ করতে পারেন, যদি কোম্পানি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করে যেমন উচ্চতর শেয়ারমূল্য, বাজারমূল্য বৃদ্ধি বা পরিচালন মুনাফার উন্নতি। এ ধরনের পারফরম্যান্সভিত্তিক কাঠামোর কারণে ২০২৪ সালে সিইওদের শেয়ারভিত্তিক প্রণোদনার পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে মূল বেতন বেড়েছে মাত্র ৪ শতাংশ।
২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি বেতন প্যাকেজ পেয়েছেন অ্যাকসন এন্টারপ্রাইজেসের সিইও রিক স্মিথ। তিনি পেয়েছেন ১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের বেতন প্যাকেজ। অ্যাকসন টেজার অস্ত্র ও বডি ক্যামেরা তৈরি করে। ওই বছর কোম্পানির বার্ষিক মুনাফা টানা তৃতীয় বছরের মতো ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে ও নিট আয় দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারমূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। তবে রিক স্মিথের বড় এ বেতন প্যাকেজ সম্পূর্ণই পারফরম্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২০২৪-৩০ সালের মধ্যে কোম্পানি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে তবেই তিনি এ শেয়ারগুলো নগদায়ন করতে পারবেন।
শীর্ষ বেতনপ্রাপ্তদের তালিকায় আরো আছেন জিই অ্যারোস্পেসের সিইও লরেন্স কাল্প (৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার), অ্যাপলের সিইও টিম কুক (৭ কোটি ৪৬ লাখ ডলার), ক্যারিয়ার গ্লোবালের সিইও ডেভিড গিটলিন (৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার) ও নেটফ্লিক্সের সিইও টেড সারানডস (৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার)। তাদের বেতন প্যাকেজের বড় অংশই এসেছে শেয়ারভিত্তিক প্রণোদনা থেকে। নারী সিইওদেরও বেতন বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। ২০২৪ সালে জরিপে অন্তর্ভুক্ত নারী সিইওর সংখ্যা ছিল ২৭, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ। তাদের গড় বেতন প্যাকেজ ছিল ২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন পেয়েছেন জুডিথ মার্কস, যিনি ওটিস ওয়ার্ল্ডওয়াইডের সিইও। তার মোট বেতন প্যাকেজ ছিল ৪ কোটি ২১ লাখ ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখই ছিল শেয়ারভিত্তিক প্রণোদনা। শীর্ষ বেতনপ্রাপ্ত নারী সিইওদের তালিকায় আরো আছেন সিটিগ্রুপের সিইও জেইন ফ্রেজার (৩ কোটি ১১ লাখ ডলার), অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসের সিইও লিসা সু (৩ কোটি ১০ লাখ ডলার), জেনারেল মোটরসের সিইও মেরি বারা (২ কোটি ৯৫ লাখ ডলার) ও উইলিয়ামস-সোনোমার সিইও লরা আলবার (২ কোটি ৭৭ লাখ ডলার)।
তবে সাধারণ কর্মী ও সিইওদের আয়ের মধ্যে ব্যবধান এখনো বিশাল। জরিপ অনুযায়ী, অনেক কোম্পানিতে একজন কর্মীকে সিইওর এক বছরের সমপরিমাণ আয় করতে প্রায় ১৯২ বছর কাজ করতে হবে। এ ‘পে রেশিও’ প্রকাশ করা ২০১৮ সাল থেকে কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সিইও ও কর্মীদের আয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধান দেখা গেছে ক্রুজ লাইন কোম্পানি কার্নিভাল করপোরেশনে। সেখানে সিইওর বেতন গড় কর্মীর তুলনায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ গুণ বেশি। একই চিত্র দেখা গেছে ম্যাকডোনাল্ডসেও, যেখানে সিইওর আয় গড় কর্মীর তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি।
অন্যদিকে ২০২৪ সালে সিইওদের নিরাপত্তা সুবিধাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইকুইলারের তথ্যানুযায়ী, এসব কোম্পানি নিরাপত্তা খাতে গড় ব্যয় করেছে ৯৪ হাজার ২৭৬ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। এ ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের সিইও ব্রায়ান থম্পসনের ওপর হামলার ঘটনাকেও কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিইওদের বেতন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ও কর্মীদের সীমিত বেতন বৃদ্ধি ভবিষ্যতে নৈতিক প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কর্মী-সিইও বৈষম্য কমাতে কোম্পানিগুলোর আরো ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকেই।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন