হোয়াইট হাউজ ছাড়লেন ইলন মাস্ক, তবে তার ‘দপ্তরের কাজ চলবে’ – The Finance BD
 ঢাকা     শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন

হোয়াইট হাউজ ছাড়লেন ইলন মাস্ক, তবে তার ‘দপ্তরের কাজ চলবে’

  • ২৯/০৫/২০২৫

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার একদিন আগেই অবশ্য মাস্ক ট্রাম্পের বহু-ট্রিলিয়ন ডলারের করছাড় ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসন ছেড়ে দিচ্ছেন। সরকারি খরচ কমাতে নেতৃত্ব দেয়া এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রচেষ্টার পর এ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। খবর বিবিসির। হোয়াইট হাউজ বুধবার রাতে মাস্ককে বিশেষ সরকারি কর্মচারীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত দপ্তর চালানোর সুযোগ দেয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাস্ক।  এক্স-এ মাস্ক লিখেছেন, ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমার সময়সীমা শেষ হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কে ধন্যবাদ জানাই অপচয় রোধের সুযোগ দেয়ার জন্য।’

‘সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত দপ্তর আরও শক্তিশালী হবে এবং এটি সরকারের প্রতিটি স্তরে এক জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠবে।’ দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মাস্ককে ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, যার মাধ্যমে তিনি বছরে ১৩০ দিন সরকারি চাকরিতে কাজ করতে পারতেন। হোয়াইট হাউজে তার ভূমিকা অস্থায়ী ছিল, তাই তার প্রস্থান অপ্রত্যাশিত নয়। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের ২০ জানুয়ারি থেকে এ হিসাব অনুযায়ী, মে মাসের শেষ নাগাদ মাস্কের সময়সীমা পূর্ণ হতো। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার একদিন আগেই অবশ্য মাস্ক ট্রাম্পের বহু-ট্রিলিয়ন ডলারের করছাড় ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএসকে বলেন, ট্রাম্প যেটিকে ‘বড়, সুন্দর বাজেট প্রস্তাব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দেবে। মাস্কের মতে, এই বাজেট পরিকল্পনা ‘সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত দপ্তরের কাজকর্মকে দুর্বল করবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাজেট প্রস্তাব বড় হতে পারে বা সুন্দর হতে পারে। কিন্তু দুটো একসাথে হতে পারে কিনা জানি না।’

মাস্ক শুরুতে সরকারি বাজেট থেকে কমপক্ষে ২ ট্রিলিয়ন ডলার কাটার ঘোষণা দেন, পরে তা অর্ধেক, এরপর ১৫০ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনেন। ‘সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত দপ্তরের উদ্যোগের ফলে আনুমানিক ২৩ লাখ ফেডারেল বেসামরিক কর্মীর মধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজারের চাকরি কাটা হয়েছে বা স্বেচ্ছাবসরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ফেডারেল বিচারকরা গণহারে চাকরিচ্যুতির ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে ছাঁটাইকৃত কর্মীদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন। এই দ্রুতছাঁটাই প্রক্রিয়ায় ভুলক্রমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মী, এমনকি পারমাণবিক কর্মসূচির কর্মীরাও চাকরি হারান। মাস্ক এপ্রিলের শেষ দিকে ঘোষণা দেন যে, তিনি নিজের কোম্পানিগুলো পরিচালনায় মনোযোগ দিতে প্রশাসন থেকে সরে যাবেন। ওয়াশিংটনকে বদলে দেওয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচারণার সমালোচনার মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ‘সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত দপ্তর তো সবকিছুর জন্যই দোষারোপের পাত্র হয়ে যাচ্ছে,’ মঙ্গলবার টেক্সাসে এক স্পেস এক্স উৎক্ষেপণের আগে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন মাস্ক।

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানেই খারাপ কিছু হোক না কেন, আমাদেরকেই দোষারোপ করা হতো, যদিও আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।’ সরকারে মাস্কের কাজের সময়েই তার বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানির বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এ বছরের প্রথম তিন মাসে টেসলার গাড়ি বিক্রি ১৩ শতাংশ কমেছে, যা কোম্পানির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন। টেসলার শেয়ার দামও ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। টেসলা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে যে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিক্রয় চাহিদায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে এবং ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মাস্ক বিনিয়োগকারীদের পরে জানিয়েছেন, সরকারি দপ্তরের বদলে তিনি টেসলায় আরও বেশি সময় ব্যয় করবেন। টেসলার বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক উঠেছে, ডিলারশিপের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে, এমনকি গাড়ি এবং চার্জিং স্টেশনগুলোতে ভাঙচুরও হয়েছে।

টেসলার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া এতটাই তীব্র ও ব্যাপক হয়ে উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি সতর্ক করে বলেছেন, ভাঙচুরের ঘটনাগুলোকে ‘দেশীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে গণ্য করা হবে। মঙ্গলবার কাতারের দোহায় এক অর্থনৈতিক ফোরামে মাস্ক বলেছেন, তিনি আগামী পাঁচ বছর টেসলার নেতৃত্বে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া মাস্ক আরও বলেছেন, তিনি এই মাসের শুরুতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজনৈতিক অনুদান কমাবেন, কারণ গত বছর তিনি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট প্রচারণা এবং অন্যান্য রিপাবলিকানদের সমর্থনে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us