চীনের শেনঝেন শহরের হুয়াচিয়াংবেই এলাকায় অবস্থিত ফেইয়াং টাইমস টাওয়ার। বাইরে থেকে দেখে সাধারণ একটি ভবন মনে হলেও প্রযুক্তি দুনিয়ায় এটি বেশ আলোচিত নাম। কারণ ভবনটির চতুর্থ তলা বিশেষভাবে সমাদৃত। এখানে বিক্রি হয় হাজার হাজার বিদেশী পুরনো আইফোন, যেগুলোর একটি বড় অংশ চোরাই বা সন্দেহজনক উৎস থেকে আসে বলে ধারণা করেন অনেকেই। সেজন্য অনেকের কাছে ভবনটি ‘স্টোলেন আইফোন বিল্ডিং’ নামে পরিচিত।
অনেক পুরনো আইফোন বৈধভাবে বাজারে এসেছে, যেমন পশ্চিমা অনেক ব্যবহারকারী নতুন ফোন কিনলে পুরনোটি বিক্রি বা বিনিময় করেন। তবে অনলাইন ফোরাম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফোন চুরি হওয়া ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব ফোনের একটি বড় অংশ আসলে চুরি হওয়া বা সন্দেহজনকভাবে সংগ্রহ করা। ব্যবসাটির মূল কেন্দ্রে রয়েছে হংকং, যেখানে শত শত পাইকারি ব্যবসায়ী ইলেকট্রনিক পণ্য কেনাবেচা করেন। হংকংয়ের তুলনামূলক সহজ কাস্টমস নীতিমালা ও শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে হংকং হয়ে চোরাই ফোন সহজে চলে আসে মূল ভূখণ্ড চীনের বাজারে, বিশেষ করে শেনঝেনের হুয়াচিয়াংবেই এলাকায়।
লন্ডনের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা স্যাম আমরানি নিজের চুরি যাওয়া আইফোন ১৫ প্রো ফোনটি ট্র্যাক করে দেখতে পান, সেটি লন্ডন থেকে শুরু করে হংকং হয়ে শেনঝেনে পৌঁছেছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে লিংকডইনে পোস্ট করার পর দেখেন, অনেকেই একই ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। হুয়াচিয়াংবেইয়ের বাজারে ফোনের সব অংশের চাহিদা আছে। স্ক্রিন, চিপ, কেসিং এমনকি ভাঙা প্লাস্টিকও কেউ না কেউ কিনে নেয়। অনেক সময় কোনো ফোন যদি লক থাকে ও আনলক করা সম্ভব না হয়, তবু সেটি খুলে যন্ত্রাংশ আলাদা করে বিক্রি করে আয় করা যায়
বিকাল হতেই ফেইয়াং বিল্ডিংয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা সরগরম ওঠে। চীন, হংকং এবং আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট কাচঘেরা দোকানে ঢুকে ব্যাচ হিসেবে আইফোন কিনতে দরকষাকষি করেন।
বিশেষ করে সিম-লক থাকা মার্কিন মডেলের আইফোন পাকিস্তান, লিবিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বেশ জনপ্রিয়। এসব দেশের ব্যবহারকারীরা ফোনগুলো মোবাইল কলের জন্য না ব্যবহার করে মূলত ক্যামেরা, গেমিং আর ওয়াই-ফাই ব্যবহারের জন্য কেনেন। ফেইয়াং বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় বিক্রি হয়
আইফোনের যন্ত্রাংশ। ওপরের তলা থেকে যেসব ফোন আনলক করা যায় না, সেগুলো খুলে এনে সেখানে স্ক্রিন, বোর্ড, ব্যাটারি আলাদা করে বিক্রি করা হয়। এসব ফোনের বেশির ভাগই আসে হংকংয়ের কুন টং এলাকার একটি ৩১ তলা বাণিজ্যিক ভবন থেকে। সেখানে ছোট ছোট অফিসে বসে শত শত হোলসেলার হোয়াটসঅ্যাপসহ নানা অ্যাপের মাধ্যমে ফোন বাছাই ও নিলাম পরিচালনা করেন। অনেক ফোনের বাক্সে লেখা থাকে ‘হ্যাজ আইডি’ বা ‘নো আইডি’, যা বোঝায় ফোনটি লক করা কিনা।
শেনঝেনের একজন বিক্রেতা কেভিন লি বলেন, ‘এ ফোনগুলো হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে চুরি হয়েছে, সেগুলো হংকং হয়ে এখানে আসে। লক থাকলেও এখানে এগুলোর দাম আছে। কারণ শেনঝেনে এমন পণ্যের জন্য বাজার আছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, এই গ্রে মার্কেট যেমন বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে, তেমনি চোরাই পণ্যের ওপর নির্ভরশীল প্রযুক্তি সরবরাহ ব্যবস্থার এক অন্ধকার দিকও সামনে আনছে। হুয়াচিয়াংবেই এখন পুরনো আইফোন পুনর্ব্যবহারের বিশ্বজুড়ে অন্যতম বড় কেন্দ্র-এর অনেক ফোন যে চোরাই উৎস থেকে আসে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
– ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস অবলম্বনে
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন