যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাব—যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্সে ৫ শতাংশ হারে করারোপ—বাংলাদেশের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় গ্রহণকারী প্রধান দেশগুলোর একটি হওয়ায় এ প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা বাংলাদেশে প্রায় ৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন বা ৩৯৪ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। দেশের মোট রেমিট্যান্স আয়ের যা ১৮ শতাংশের বেশি। এ পরিসংখ্যান থেকে মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁদের ভূমিকা কতটা, তা পরিষ্কার হয়ে যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে প্রবাসী আয়প্রবাহে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে আছে তুলনামূলকভাবে অনুকূল বিনিময় হার এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বিনিময় হারের ব্যবধান কমে আসা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় অনেক উপসাগরীয় দেশের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, আর্থিক সহায়তার উৎসে পরিবর্তন আসছে। ২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন বা ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় হিসেবে পেয়েছে। এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, এই আয় উৎস দেশের অসংখ্য পরিবারে, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের করারোপ করা হলে সরাসরি প্রবাসী পরিবারের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ কমে যাবে। তখন অনেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক পন্থা অবলম্বনে বাধ্য হবেন। ফলে হুন্ডির মতো অনিয়ন্ত্রিত পন্থার ব্যবহার বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আর্থিক প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এ পরিস্থিতির কারণে প্রবাসী আয়ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। এ ছাড়া এমন সময় দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়বে, যখন বৈদেশিক খাত এখনো চাপের মুখে আছে। এ প্রস্তাবের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের উচিত হবে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করা। সেই সঙ্গে কর প্রস্তাবের পরিণতি এবং এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর লাখ লাখ পরিবারের ওপর যে প্রভাব পড়বে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা। প্রবাসী আয় পাঠানোর আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো আরও আকর্ষণীয় করে তোলার দিকেও নজর দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং সেবার সহজলভ্যতা বাড়ানো, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবহার আরও সহজ করা আর দ্রুত ও কম খরচে লেনদেনের সুযোগ তৈরি করা। এ ছাড়া প্রবাসী আয় প্রেরক ও দেশীয় গ্রহীতাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের উপকারিতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালানো জরুরি। অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে কড়া নজরদারি করাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সেগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সবশেষে সম্প্রতি যে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তা কার্যকর করা সময়ের দাবি। এতে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে এবং প্রবাসীরা হুন্ডির মতো পথ থেকে সরে এসে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন