আইডিসির প্রতিবেদনঃ বিশ্বব্যাপী টেলিকম বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতির পূর্বাভাস – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

আইডিসির প্রতিবেদনঃ বিশ্বব্যাপী টেলিকম বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতির পূর্বাভাস

  • ১৭/০৫/২০২৫

বিশ্বজুড়ে ২০২৪ সালে টেলিকমিউনিকেশন ও পেইড টিভি পরিষেবায় মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫১ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি ডলার। অর্থের এ পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। তবে চলতি বছর খাতটির প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি)।
প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক টেলিকম খাতে ব্যয় সামান্য বেড়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ৫৩৫ ট্রিলিয়ন (১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক টেলিকম খাত আগের বছরের তুলনায় দ্রুত হারে বেড়েছে। এ প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ ছিল মূল্যস্ফীতি। ওই সময় বিভিন্ন দেশে টেলিকম অপারেটররা পরিষেবার মূল্য বাড়িয়েছে। ফলে ব্যক্তি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উভয়েরই এ খাতে ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এ প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। এসব অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় তারা সহজে সাশ্রয়ী বিকল্পে সরে যায়নি। দাম বাড়লেও তারা টেলিকম সেবা গ্রহণে সচল ছিল।
অন্যদিকে গত বছর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির হার ছিল তুলনামূলকভাবে ধীর। কারণ ২০২২ ও ২০২৩ সালে অঞ্চলটিতে কভিড-পরবর্তী অর্থনীতির পুনরুদ্ধার খুব দ্রুত ও জোরালো ছিল। মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার পর ওই সময় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেকে নতুন করে টেলিকম সেবা নিতে শুরু করে। ফলে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু ২০২৪ সালে সে ধারা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। যেহেতু অনেক গ্রাহক আগেই নতুন সংযোগ নিয়েছে, তাই ২০২৪ সালে অতিরিক্ত নতুন চাহিদা তৈরি হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু এখন অনেক দেশেরই মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় কমে এসেছে, তাই ভবিষ্যতে টেলিকম কোম্পানিগুলোও আর সহজে দাম বাড়াতে পারবে না। দামের চাপ কমলে খাতটির আয় বাড়ার সুযোগ কমবে।
আইডিসি বলছে, টেলিকম খাতে সাম্প্রতিক বছরে স্বল্পমেয়াদি কিছু পরিবর্তন দেখা গেলেও, পুরো শিল্পটি এখন বড় প্রযুক্তিগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে, যা গ্রাহকসেবা ও অভ্যন্তরীণ কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করছে। পাশাপাশি ফাইভজি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগও বাড়ছে। বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানি নিজেদের ব্যবসা ও প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বিশেষ ধরনের সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করছে।
এছাড়া ফাইবার-অপটিক নেটওয়ার্ক ও লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট প্রযুক্তির বিস্তার এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে এবং ইন্টারনেট সংযোগের মান উন্নত করছে। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যা টেলিকম খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও পরিষেবাটি মূলত দেশের ভেতরে ব্যবহার হয়, তবে আমদানীকৃত সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিতে শুল্ক বাড়ার ফলে খরচ বেড়ে যেতে পারে।
টেলিকম পরিষেবা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোবাইল পরিষেবাগুলো এখনো সবচেয়ে বড় খাত। কারণ মোবাইল ডাটা ও মেশিন টু মেশিন (এমটুএম) অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বেড়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময় বিশ্বব্যাপী মোবাইল কল ও টেক্সট মেসেজিংয়ের ব্যয় কমছে। আইডিসির মতে, অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার এ সময়ে টেলিকম কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখাই ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠবে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us