শতাব্দী পুরনো টিফানির জানালার দাম হতে পারে ৩০ লাখ ডলার – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন

শতাব্দী পুরনো টিফানির জানালার দাম হতে পারে ৩০ লাখ ডলার

  • ১৪/০৫/২০২৫

আমেরিকায় নন্দনতত্ত্বের ধারণা ও শিল্পকলা বিকাশের এক অনন্য যুগ ছিল উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে বিশ শতকের গোড়ার সময়টি। একে বলা হয় গিল্ডেড এজ। ওই সময় আমেরিকার চিত্রশিল্পী লুই কমফোর্ট টিফানি গড়ে তোলেন স্বতন্ত্র এক শৈলী, যা শিল্পমহলে আজও অতুলনীয় বলে বিবেচিত। চিত্রকর্ম ও কারুকাজের সমন্বয়ে কাচশিল্পের ওই ধারাটির পরিচিতও হয় টিফানির নামে। এবার সে যুগের তৈরি একটি কাচের জানালা উঠেছে নিলামে। জানালাটির প্রাথমিক মূল্য ধরা হচ্ছে ২০-৩০ লাখ ডলার।

গদার মেমোরিয়াল উইন্ডো নামের জানালাটি তৈরি হয়েছিল ১৯১০ সালে। কাচের কারুকাজে অনন্য এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জানালাটি এখনো শিল্পবোদ্ধাদের গভীর আগ্রহের বিষয়। টিফানির জানালাগুলো সাধারণত গির্জা, প্রাসাদ কিংবা সমাজের অভিজাতদের আলিশান বাড়িতে স্থাপন করা হতো। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য এগুলোর মালিক হওয়ার সুযোগ বরাবরই অত্যন্ত বিরল। তবে গত কয়েক বছরে টিফানি স্টুডিওর কিছু জানালা বিশ্ববিখ্যাত জাদুঘর ও নিলামঘরগুলোয় বিপুল দামে বিক্রি হয়েছে। ২০২৩ সালে নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট তাদের আমেরিকান উইংয়ে প্রদর্শনের জন্য একটি বিশাল টিফানি জানালা সংগ্রহ করে।

এরপর ওহাইওর একটি চার্চ থেকে সংগ্রহ করা হয় ইমপ্রেশনিস্টিক ঘরানায় তৈরি আরো একটি জানালা। ১ কোটি ২৪ লাখ ডলারে বিক্রি হওয়া সেই জানালাটি টিফানির যেকোনো শিল্পকর্মের দামের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায়ই বিশ্বখ্যাত নিলাম প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টি’জ আগামী ১২ জুনের ডিজাইন সেলে নিলামে তুলতে যাচ্ছে গদার মেমোরিয়াল উইন্ডো নামের জানালাটি। টিফানি স্টুডিওর সৃষ্টিকর্মগুলোর প্রধান কারিগর ছিলেন অ্যাগনেস নর্থরাপ। যদিও গদার মেমোরিয়াল জানালাটি সরাসরি অ্যাগনেস নর্থরাপের হাতে তৈরি নয়, তবু এতে সেই একই নিখুঁত সূক্ষ্মতা ও নান্দনিকতার বহিঃপ্রকাশ দৃশ্যমান। জানালায় কাচের কারুকাজে আঁকা প্রস্ফুটিত ফুল, বাঁকা নদী, দূরের পাহাড়ে আলোছায়ার মিতালি—সব মিলিয়ে এটি যেন এক টুকরো স্বর্গ।

মেরি এডিথ জেনকস গদার নামে এক নারী তার প্রয়াত স্বামী উইলিয়াম গদারের শোককে স্মরণীয় করে রাখতে জানালাটি তৈরি করিয়েছিলেন। রোড আইল্যান্ডের ইস্ট গ্রিনউইচে অবস্থিত একটি গির্জার দেয়ালে জানালাটি স্থাপন করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। মেরি চেয়েছিলেন, জানালাটিতে যেন তারুণ্য ও নবজীবনের প্রতীক হিসেবে একটি অ্যাপল ব্লোসম গাছ থাকে। শিল্পীরা নিখুঁত দক্ষতায় জানালার বাম দিকজুড়ে ফুলে ভরা একটি অ্যাপল ব্লোসম গাছ এঁকে মেরির সেই অনুরোধ রেখেছিলেন।

সম্প্রতি পাওয়া গেছে টিফানি স্টুডিওর ভেতরকার একটি ছবি। ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৯১৩ সালে—গদার মেমোরিয়াল উইন্ডো তৈরির তিন বছর পর। ছবিতে দেখা যায়, স্টুডিওর দেয়ালে একটি কাগজে আঁকা অবস্থায় দেয়ালে ঝুলছে গদার মেমোরিয়াল জানালার ঐতিহাসিক নকশাটি। তার নিচে কাজ করছেন অ্যাপ্রন পরা কর্মীরা। টিফানি স্টুডিও ওই সময় থেকেই শিল্প জগতে প্রতিষ্ঠিত নাম হয়ে উঠেছিল। প্যারিস এক্সপোজিশনসহ বিশ্বের নানা প্রদর্শনীতে অংশ নেয়াসহ তুমুল জনপ্রিয়তা এবং বিপুল মূল্যে নিজেদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে তারা হয়ে উঠেছিল কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প নিদর্শন গদার মেমোরিয়াল উইন্ডো।

এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে সেন্ট লুকস চার্চের দেয়ালে থাকা জানালাটি এখন বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে গির্জা কর্তৃপক্ষ। জানালাটি বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ গির্জার মিশন ও ভবিষ্য তহবিলের কাজে ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us