চীন-মার্কিন চুক্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বলছেন ব্যবসায়ীরা – The Finance BD
 ঢাকা     রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন

চীন-মার্কিন চুক্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বলছেন ব্যবসায়ীরা

  • ১৩/০৫/২০২৫

উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরস্পরের ওপর আরোপিত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ ৯০ দিনের জন্য কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনের এ খবরকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রাপ্তি হিসেবে দেখছে বৈশ্বিক আর্থিক খাত। টানা দুদিনের বৈঠক শেষে দুই দেশের পক্ষ থেকে আসা এ সংক্রান্ত ঘোষণার পর বৈশ্বিক পুঁজি, পণ্য ও মুদ্রাবাজারে ইতিবাচক বিনিয়োগ প্রবণতা দেখা গেছে গতকাল। খবর এফটি ও রয়টার্স। বৈশ্বিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক উথালপাতাল অবস্থার মধ্যে জেনেভায় চীন-মার্কিন বাণিজ্য বৈঠকের ঘোষণা ছিল আশাবাদের সূচনা। দ্রুত এর প্রভাব পড়ে আর্থিক বাজারে, চূড়ান্ত ঘোষণার পর সে রেশ বজায় থাকল। চুক্তির অংশ হিসেবে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ১২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামাবে বেইজিং।
দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার ৬০ হাজার কোটি ডলার। শুল্কযুদ্ধ শুরুর পর এ বাণিজ্যে দেখা দেয় স্থবিরতা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাপণ্যের সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটে, মূল্যস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কা দেখা দেয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাঁটাইও শুরু হয়েছিল। চুক্তির ঘোষণার পর গতকাল বিশ্ববাজার ইতিবাচক সাড়া দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া নাসডাক ফিউচার সূচক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক বাড়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। স্টক্স ইউরোপ ৬০০ সূচক ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ে। এ সময় ডলারের বিনিময় হার দশমিক ৭ শতাংশ শক্তিশালী হয়। দশমিক ৫ শতাংশ শক্তিশালী হয় চীনা রেনমিনবি। উল্টো দিকে নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে পরিচিত সুইস ফ্রাঁ ও ইয়েন যথাক্রমে ১ দশমিক ৫ ও ১ দশমিক ৬ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। আপৎকালীন বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত স্বর্ণের দাম কমে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ইতিবাচক প্রভাব পড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ও মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএনজির বিশ্লেষক ক্রিস টার্নার বলেন, ‘বাজার যা আশা করেছিল, তার তুলনায় আগেভাগেই ও বেশি মাত্রার শুল্ক ছাড় পাওয়া গেছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ও ডলারে শক্তিশালী উত্থান দেখা গেছে।’ জেপি মরগানের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের চিফ মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট তাই হুই বলেন, ‘এ শুল্ক হ্রাস প্রত্যাশার তুলনায় বড়। এটি দেখায়, উভয় দেশই বুঝতে পারছে যে শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে আঘাত করছে এবং আলোচনাই ভালো পথ।’
গতকাল এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘আমরা আরো ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য চাই এবং আমি মনে করি দুই পক্ষই সে লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেউই বিচ্ছিন্নতা চায় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ৯০ দিনের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ স্থগিত রাখছি এবং শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ শতাংশেরও বেশি কমানো হয়েছে।’ চীন-যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশ নিজেদের স্বার্থ খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একই সময়ে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে চীন। সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, চলমান আলোচনা উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সমাধানে সহায়তা করবে।’
গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পর থেকে চীনের পণ্যের ওপর দফায় দফায় শুল্ক আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিবারই প্রতিক্রিয়া দেখাতে সময় নেয়নি চীন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এ লড়াই পুরো বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব ফেলে। এমনকি আর্থিক সংস্থাগুলো চলতি বছরের জন্য জিডিপির পূর্বাভাস সংশোধন করে কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়। এ কঠোর শুল্কনীতি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটায়। গত মাসে বেসেন্ট স্বীকার করেছিলেন এ পরিস্থিতি টেকসই নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ চুক্তি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তবে এটি দুই পরাশক্তির মধ্যে অর্থনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনের প্রথম উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। সুইজারল্যান্ডের ওই আলোচনায় হোয়াইট হাউজের পক্ষে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার এবং চীনের পক্ষে ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী হি লিফেং। জেমিসন গ্রিয়ার বলেন, ‘এ আলোচনায় দ্রুত আমরা একমত হয়েছি, এটি প্রমাণ করে যে হয়তো পার্থক্যগুলো এত বড় ছিল না যেমনটা ভাবা হয়েছিল।’
এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যানের সিইও জেমি ডিমনসহ মার্কিন ব্যবসায়ী নেতারা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। এক বৈঠকে মার্কিন খুচরা বিক্রেতা চেইন ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের প্রধান নির্বাহীরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, শুল্কের কারণে তাদের দোকানে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে। অবশ্য আলোচনা শুরু করা সহজ ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার উভয় দেশ আলোচনায় রাজি নয় বলেই ইঙ্গিত দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘বুলিং বা জবরদস্তি’র অভিযোগ আনে বেইজিং এবং বলেছিল তারা কখনো আত্মসমর্পণ করবে না। তবে আলোচনার সময় উভয় পক্ষই সহনশীল মনোভাব দেখিয়েছে। ফেন্টানিল ইস্যু দুই দেশের বিরোধের অন্যতম কারণ। এ বিসয়ে জেমিসন গ্রিয়ার বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই ফেন্টানিল ইস্যুতে গঠনমূলকভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে এবং সেখানে ইতিবাচক অগ্রগতির পথ রয়েছে।’ চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘উভয় পক্ষ পারস্পরিক উন্মুক্ততা, নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ, সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কাজ এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে।’

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us