আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পারস্পরিক শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলে বাজারে বিনিয়োগ প্রবণতা বেড়ে মূল্যবৃদ্ধি পায় পণ্যটির। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের শীর্ষ দুই জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ এ বাণিজ্য বিরোধ প্রশমনের পথে এগিয়ে যাওয়ায় বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম গতকাল ব্যারেলপ্রতি ২ ডলার ১১ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৬৪ ডলার ১৪ সেন্টে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম গতকাল স্থির হয়েছে ব্যারেলে ৬৩ ডলার ১৪ সেন্ট, গত সপ্তাহের লেনদেনের শেষদিন শুক্রবারের তুলনায় ২ ডলার ১২ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।
রোববার জেনেভায় অনুষ্ঠিত বাণিজ্য আলোচনার পর উভয় দেশই যৌথ বিবৃতিতে জানায়, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক ২৪ শতাংশ অতিরিক্ত অ্যাড ভ্যালোরেম (পণ্যের হিসাবকৃত মূল্যের ওপর আনুপাতিক হারে আরোপিত শুল্ক) শুল্ক প্রাথমিকভাবে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবারও ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআইয়ের দাম ব্যারেলে ১ ডলারের বেশি বেড়েছিল। গত সপ্তাহে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল ৪ শতাংশের বেশি, এপ্রিলের মাঝামাঝির পর থেকে প্রথম সাপ্তাহিক বৃদ্ধি। বাজার বিশ্লেষকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আলোচনার খবরে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের বিঘ্ন নাও ঘটতে পারে, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। জাপানভিত্তিক ব্রোকারেজ ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ফুজিতোমি সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক তোশিতাকা তাজাওয়া বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ওপেকের উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনার কারণে পণ্যটির দাম উল্লেখযোগ্য বাড়ার সম্ভাবনা কম।’
ওপেক প্লাসের ঘোষণা অনুযায়ী, বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারের মৌলিক চিত্র ভালো রয়েছে এবং মজুদ কম। এ কারণে আগামী মাসে উত্তোলন বাড়ানো হবে দৈনিক গড়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল।
তবে রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, এপ্রিলে ওপেকের উত্তোলন কিছুটা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল রফতানি সীমিত করার প্রচেষ্টা এবং ইরাক ও লিবিয়ার আংশিক উত্তোলন হ্রাস এ কমতির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। জরিপ অনুযায়ী, গত মাসে ওপেকভুক্ত দেশগুলো দৈনিক গড়ে ২ কোটি ৬৬ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, যা মার্চের তুলনায় দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার ব্যারেল কম। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা রোববার ওমানে শেষ হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চুক্তি হলে বৈশ্বিক জ্বালানি তেল সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কা কমে আসবে। এতে পণ্যটির দামে আরো চাপ তৈরি হতে পারে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন