বিশ্বের ধনী ৩ দেশ সফরে যাবেন ট্রাম্প: তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো কী? – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের ধনী ৩ দেশ সফরে যাবেন ট্রাম্প: তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো কী?

  • ১২/০৫/২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগামীকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবে পৌঁছাবেন, এরপর কাতার ও তারপর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। ১৬ মে পর্যন্ত চলবে ট্রাম্পের এ সফর। আগামী সপ্তাহে জ্বালানি সমৃদ্ধ ধনী তিন উপসাগরীয় আরব দেশ সফরে যাবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারা ইতোমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। একইসঙ্গে তারা গাজা, ইউক্রেন ও ইরান নিয়ে চলমান সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্যও আগ্রহী। এর পুরস্কার হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম সফরের স্বাগতিক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগামীকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবে পৌঁছাবেন, এরপর কাতার ও তারপর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। ১৬ মে পর্যন্ত চলবে ট্রাম্পের এ সফর। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিনিময়ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির প্রেক্ষাপটে, এই তিনটি রাষ্ট্রের দেওয়ার মতো অনেক কিছুই রয়েছে।
বাহরাইনে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো হাসান আলহাসান বলেন, “ট্রাম্পের দৃষ্টিতে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো সব শর্ত পূরণ করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করছে এবং মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থার পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।” ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় অঞ্চলের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় নিজেদের চাহিদার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের অভাব দেখে হতাশ হয়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সামরিক, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহুমুখীকরণের চেষ্টা করেছিল। তবে ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় আসায় তারা এটিকে একটি ‘জীবনে একবারই আসে এমন সুযোগ’ হিসেবে দেখছে।
লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি নিরাপত্তা চুক্তি
‘নিরাপত্তা, নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা’ — ট্রাম্পের সফর থেকে সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা এটাই বলে মন্তব্য করেছেন সৌদি আরবের রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক ও বিশ্লেষক আলি শিহাবি। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অঙ্গীকার ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনঃনিশ্চিত করার আশা করছে। ট্রাম্পের অনেক অগ্রাধিকার আছে এবং তিনি খুব দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বলেও পরিচিত… তাই তারা চান তাকে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত রাখতে।’
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু চুক্তিটি আটকে যায়, কারণ সৌদি আরব চাইছিল ইসরায়েল যেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয় — যা ইসরায়েল দিতে রাজি হয়নি। এছাড়া একটি সিভিল নিউক্লিয়ার প্রোগাম (জ্বালানি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে) চালুর জন্য রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাচ্ছে। তবে এটি আটকে গেছে কারণ সৌদি আরব ইউরেনিয়াম দেশীয়ভাবে সমৃদ্ধ করতে চাচ্ছে — যা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউরেনিয়াম যখন উচ্চ মাত্রায় সমৃদ্ধ হয়, তখন তা পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারে। যদি সৌদি আরবের পারমাণবিক প্রোগ্রামের জন্য হোয়াইট হাউস সমর্থন দেয়, তবে এটি আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে লাভজনক চুক্তি জয়ের সুযোগ দিতে পারে। গত মার্চে ট্রাম্প বলেছিলেন, যদি সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে তবে তিনি সৌদি আরবে যাবেন। তিনি বলেন, ‘তারা এটা করতে রাজি হয়েছে, তাই আমি সেখানে যাব।’ যদিও সৌদি আরব ঐ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিমাণ নিশ্চিত করেনি, তবে জানুয়ারি মাসে তারা ঘোষণা করেছে যে তারা চার বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ৬০০ বিলিয়ন ডলার বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে এবং তা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় করতে চায় সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের নীতির কারণে তেলের দাম কমে যাওয়া এই লক্ষ্য অর্জনকে কঠিন করে তুলছে।
ইউএই’র এআইয়ে আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য এবং লাভ অর্জনের জন্য বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক গভীর করার কৌশল হিসেবে, সম্ভবত সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এই বিনিয়োগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তারাও যুক্তরাষ্ট্রে ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত মার্চে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ১০ বছরব্যাপী ১.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে এআই, সেমিকন্ডাক্টর, উৎপাদন এবং জ্বালানি খাতগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইউএই এর দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির বিদ্যমান বিনিয়োগ ইতোমধ্যেই এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এআই এবং অ্যাডভান্সড টেকনোলজি-তে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসেবে পরিণত হতে একে একমাত্র সুযোগ হিসেবে দেখছে। তবে, আবু ধাবির জন্য ২০৩১ সালের মধ্যে গ্লোবাল লিডার হিসেবে এআই-তে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজ হবে না যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোচিপ না পায়। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন শেষ দিনগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র চীন এর মতো বিদেশি শত্রুদের হাতে অ্যাডভান্সড টেকনোলজি পড়ে যাক, এমনটা ঠেকাতে এআই রপ্তানির উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যা ১৫ মে থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ইউএই এমন একটি দেশ ছিল যা এই বিধিনিষেধের সম্মুখীন এবং তারা আশা করছে যে ট্রাম্পের সফরের সময় এসব বিধিনিষেধ শিথিল হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে, বাইডেন প্রশাসনের কিছু বিধিনিষেধ বাতিল করবেন ট্রাম্প।
কাতারের বৈশ্বিক কূটনীতি
কাতার বিশ্বের অন্যতম আরব দেশ যার সঙোগ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্পর্ক রয়েছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। গত বছর, যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপ একটি চুক্তি করেছে যার মাধ্যমে কাতারের বিশাল ঘাঁটিতে তার সামরিক উপস্থিতি আরও ১০ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, ১৯৯২ সালের একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সংশোধন করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করা। ২০২২ সালে, বাইডেন প্রশাসন কাতারকে একটি প্রধান ন্যাটো-বহির্ভূত মিত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। কাতার একাধিক যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করেছে, যেমন গাজা এবং আফগানিস্তান যুদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি কাতারের একটি প্রচেষ্টা যাতে তারা ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে থাকতে পারে। এছাড়া সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট, আহমেদ আল-শারার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে দোহা। আহমেদ আল-শারার পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া বহু বছরের নিষেধাজ্ঞা থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করতে চাচ্ছেন।”
ট্রাম্পের সফরের সময় কাতারের জন্য সিরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন কাতারের এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, দোহা ট্রাম্প প্রশাসনকে সিরিয়ার উপর সিজার অ্যাক্টের অধীনে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে এবং কাতার ওয়াশিংটনের অনুমোদন ছাড়া সিরিয়াকে কোন আর্থিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে সতর্ক। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই তিনটি দেশ প্রত্যাশা করছে যে, তারা নতুন চুক্তি করবে যা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হবে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us