ডলার আরো দুর্বল হলে উপসাগরীয় দেশের রেমিট্যান্সে ভাটা পড়তে পারে – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

ডলার আরো দুর্বল হলে উপসাগরীয় দেশের রেমিট্যান্সে ভাটা পড়তে পারে

  • ০৪/০৫/২০২৫

ডলারের বিনিময় হার দুর্বল হতে থাকলে উপসাগরীয় দেশগুলোয় কর্মরত প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। ডলারের বিনিময় হার দুর্বল হতে থাকলে উপসাগরীয় দেশগুলোয় কর্মরত প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিরহাম ও সৌদি আরবের রিয়ালের মতো অধিকাংশ উপসাগরীয় মুদ্রার বিনিময় হার ডলারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এতে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠিয়ে আগের মতো বিনিময় মূল্য পাচ্ছেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি ও মার্কিন আর্থিক বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে ডলারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা কমেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের এ দুর্বলতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, পাকিস্তান ও মিসরের মতো দেশগুলোয় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণও কমে যেতে পারে।
দ্য ন্যাশনালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যাক্সো ব্যাংকের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট চারু চানানা বলেন, ‘বর্তমানে ডলারের দুর্বলতা সাময়িকভাবে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে তবে রেমিট্যান্সের ওপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়বে। প্রবাসীরা হয়তো অপেক্ষা করতে শুরু করবেন ভালো রেটের জন্য অথবা পাঠানো অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেবেন।’
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে, যা গ্রামীণ অর্থনীতি ও পারিবারিক ব্যয়ে বড় অবদান রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে টাকার মান কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল রাখা সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, উপসাগরীয় দেশগুলোর মুদ্রার বিনিময় হার যেহেতু ডলারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, তাই ডলার দুর্বল হলে সেগুলোর ক্রয়ক্ষমতাও কমে যায়। ফলে কোনো প্রবাসী যদি মাসে নির্দিষ্টসংখ্যক দিরহাম আয় করেন, তার টাকায় রূপান্তরিত মূল্য আগের তুলনায় কমে যাবে। অর্থাৎ পরিবারগুলো আগের মতো সমপরিমাণ অর্থ হাতে পাবে না।
আল ফারদান এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান আল ফারদান বলেন, ‘প্রবাসীরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করে অর্থ পাঠান। তাই ক্ষণিকের বিনিময় হার পরিবর্তনে বড় প্রভাব পড়ে না। তবে বড় অংকের অর্থ পাঠানোর সময় আমরা পরিবর্তন লক্ষ করি। তখন অনেকেই ভালো বিনিময় হারের জন্য অপেক্ষা করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আয় বিবেচনায় সব শ্রেণীর প্রবাসী এখন মুদ্রার ওঠানামা বুঝে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন।’ তিনি আশাবাদী যে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের বৃদ্ধি রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল রাখবে বছরের বাকি সময়েও। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ব্লকচেইন রেমিট্যান্স প্লাটফর্ম ফ্যাসেটের সিইও মোহাম্মদ রাফি হোসেন জানান, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের প্লাটফর্মে ব্যক্তিগত লেনদেনের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৫-৬ শতাংশ কমেছে। তবে সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, বিশেষত ছোট ও মাঝারি ব্যবসার কারণে।
তিনি বলেন, ‘এখনো পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডলার দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্থরগতি ও আর্থিক বাজারে আস্থার ঘাটতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ডলার ইনডেক্স প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের বিকল্প বাজারে ঝুঁকে পড়াই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
স্যাক্সো ব্যাংকের চারু চানানা বলেন, ‘আগে মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের থেকে আলাদা ও শক্তিশালী বলে ধরা হতো। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীরা আর শুধু আমেরিকায় ভরসা করছেন না। তারা অন্য দেশ বা অঞ্চলেও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’ ডলারের বিনিময় হার দীর্ঘ সময় ধরে কম থাকলে উপসাগরীয় দেশগুলোয় নতুন বিদেশী শ্রমিক আসার হার কমে যেতে পারে। কারণ আয় আগের মতো না থাকলে অনেকেই অন্য দেশে কাজ খুঁজতে পারেন বা দেশে থেকে যেতে পারেন। এতে উপসাগরীয় কোম্পানিগুলোকে শ্রমিক ধরে রাখতে বেশি বেতন দিতে হতে পারে। যদিও এখনো সেটা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কারণ গত দুই দশকে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি ব্যয় ও অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয়ে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সরকার, ব্যাংক ও রেমিট্যান্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাজ করে ভালো রেট নিশ্চিত করা, ডিজিটাল রেমিট্যান্স আরো সহজ করা ও ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। তবে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স খাত স্থিতিশীল রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের এ সময়েও লাখো প্রবাসীর ঘামে ভেজা অর্থ এখনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
খবর দ্য ন্যাশনাল।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us