চীনের এই বৈদ্যুতিক গাড়ির উত্থান শুধু দেশের জন্য নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তিতে তাদের অবস্থানও পুনর্গঠনের সুযোগ এনে দিয়েছে। ২০২৩ সালে চীনা গাড়ির বিক্রি বিদেশী গাড়িকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে বৈশ্বিক বিদ্যুৎচ্চালিত গাড়ি বাজারের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। উদ্ভাবন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন — বিশ্ববাসীকে সম্প্রতি এই বার্তাই দিল দেশটি। চীনের অর্থনৈতিক রাজধানী সাংহাইতে আয়োজিত অটো শোতে প্রদর্শিত গাড়ি দেখে এ বিষয়ে একমত প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরাও।
দুই সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে ৬০টি ফুটবল মাঠের সমান এলাকায় প্রদর্শিত হয়েছে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নতুন মডেলের গাড়ি। উড়ন্ত গাড়ি থেকে শুরু করে মাত্র পাঁচ মিনিটে শত শত মাইল চলতে সক্ষম ব্যাটারি, অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় চালনা প্রযুক্তি— প্রদর্শিত অনেক গাড়িই দর্শকদের মন কেড়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নয়, বরং এবার মঞ্চ কাঁপিয়েছে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি জায়ান্টরা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনের শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারক বিওয়াইডি-এর নতুন ইলেকট্রিক স্পোর্টস কার ডেনজা জেড উন্মোচনের সময় গোটা হল মুখর হয়ে ওঠে। একদিকে শাওমি, অন্যদিকে নিও—সব কোম্পানিই হাজির হয়েছিল চমকপ্রদ মডেল নিয়ে। চীনের এই বৈদ্যুতিক গাড়ির উত্থান শুধু দেশের জন্য নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তিতে তাদের অবস্থানও পুনর্গঠনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এক সময় বিদেশী ব্র্যান্ডের পিছনে ছুটে চলা চীনা ক্রেতারা এখন দেশী ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা দেখাচ্ছেন। ২০২৩ সালে চীনা গাড়ির বিক্রি বিদেশী গাড়িকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে বৈশ্বিক বিদ্যুৎচ্চালিত গাড়ি বাজারের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে চীন।
বিওয়াইডি ও সিয়াটলের মধ্যে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা এ শিল্পের গতি আরো বাড়িয়েছে। মাত্র পাঁচ মিনিটের চার্জে ২৫০ মাইল পার করার ব্যাটারি বাজারে আনার পর, সিয়াটল এর পাল্টা ঘোষণা ছিল ৩২০ মাইলের রেঞ্জের প্রযুক্তি। স্মার্ট ড্রাইভিং টেকনোলজি, হিউম্যান-ফ্রেন্ডলি ফিচার, এবং সাশ্রয়ী দাম—সব মিলিয়ে চীনা গাড়ির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। একাধিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই দ্রুত অগ্রগতির পেছনে আছে সরকারি সহযোগিতা, বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ, এবং উদ্যোক্তাদের দূরদৃষ্টি।
তবে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও নজর রেখেছে চীনা নির্মাতারা। ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিওয়াইডি -এর মতো ব্র্যান্ড এরইমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। চায়না অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স এর তথ্য অনুসারে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির রফতানি বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের বেড়াজাল চীনা কোম্পানিগুলোকে নতুন বাজার খুঁজতে বাধ্য করেছে। ইউরোপে শুল্কের মুখোমুখি হলেও তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইভি খাতে সমর্থন না বাড়ালে দেশটি বৈশ্বিক বাজারে অনেকটা পিছিয়ে পড়তে পারে। শাংহাই অটো শোতে উপস্থিত ফক্সওয়াগেন, নিশান, টয়োটার মতো গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চীনা প্রযুক্তির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলছে— যাতে দেশের বাজারে টিকে থাকা যায়। এর মধ্যে ফক্সওয়াগেনের এক্সপেং বিনিয়োগ, স্টেলান্টিসের লিপমোটরের সঙ্গে চুক্তি, এবং জেনারেল মোটেরসের সঙ্গে সিয়াটল ও মোমেন্টার যৌথ কাজ উল্লেখযোগ্য।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন